আবরারকে জামায়াতপন্থী ছাত্র বললেন তসলিমা নাসরিন
২০১৯ সালের অক্টোবরের শুরুর দিতে ভারতকে পানি, গ্যাস ও সমুদ্রবন্দর দেয়ার চুক্তির বিরোধিতা করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয় বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ। এরই জেরে ওই বছরের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের একটি কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে।
দুই বছরের বেশি সময়ের পর আজ বুধবার আলোচিত এই হত্যা মামলায় ২০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এর পাশাপাশি যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামিদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এই মামলার রায়ের পর বাংলাদেশের আলোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্ট আবরারকে জামায়াতপন্থী ছাত্র বলে উল্লেখ করেছেন।
তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জামায়াতপন্থী ছাত্র আবরারকে কয়েকজন আওয়ামী লীগপন্থী ছাত্র পিটিয়েছিল। পেটাতে পেটাতে এক সময় ওরা দেখলো আবরার ছেলেটি মরে গেছে। আবরার হত্যার বিচারের রায় বেরোলো আজ। ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড আর ৫ জনের যাবজ্জীবন!
“আওয়ামী লীগপন্থী ছাত্ররা যে অন্যায় করেছিল, আওয়ামীলীগপন্থী রাষ্ট্র সেই অন্যায়ের চেয়ে ২০ গুণ বেশি অন্যায় করছে। ছাত্ররা ১ জনকে হত্যা করেছিল, রাষ্ট্র তার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে ২০ জনকে হত্যা করবে। ছাত্ররা কাউকে যাবজ্জীবন দেয়নি, রাষ্ট্র ৫ জনকে দেবে। ছাত্রদের চেয়ে রাষ্ট্র নিঃসন্দেহে বেশি নৃশংস, বেশি ভয়ংকর।”
স্ট্যাটাসে তিনি আরও লিখেছেন, মানুষ জেনে বুঝে বা ভুল বুঝে, কুশিক্ষায় আক্রান্ত হয়ে, ক্রোধান্বিত হয়ে, বেপরোয়া হয়ে, মাথা গরম করে কখনও কখনও খুন করে। কিন্তু রাষ্ট্র খুন করলে ঠান্ডা মাথায় করে। রাষ্ট্র যদি খুন করে, তাহলে সর্বনাশ, কারণ মানুষের খুন অবৈধ, রাষ্ট্রের খুন বৈধ। এই খুনকে সমালোচনা করার বিধান নেই। আসলে রাষ্ট্রের দায়িত্ব জনগণকে খুন না করার, অপরাধ না করার শিক্ষা দেওয়া, জনগণকে শান্তির পথ দেখানো, সৌহার্দের বন্ধন দৃঢ় করতে শেখানো , উদারতা শেখানো। সেখানে রাষ্ট্রই যদি খুন করে, জনগণ তো খুন করাই শিখবে।
“আওয়ামী লীগ সরকার হয়তো ভেবেছে তাদের শাসন ব্যবস্থায় নিজের দলের লোককে এমন ভয়াবহ শাস্তি দিলে লোকে বাহবা দেবে, আওয়ামী লীগকে নিরপেক্ষ দল বলবে। না, তা বলার কোনও কারণ নেই। এই দল বহুবার প্রমাণ করেছে, যে, এই দল আর যা-ই হোক, নিরপেক্ষ নয়। নিরপেক্ষতা দেখাতে গিয়ে প্রাণনাশী হওয়া কিন্তু অক্ষমাযোগ্য অপরাধ।”