২২ নভেম্বর ২০২১, ১৮:৫০

উত্তরের জনপদে ডিজিটাল ডিভাইড ঘোচাতে হাবিপ্রবি শিক্ষকের ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ

মো. জুয়েল আহমেদ সরকার  © টিডিসি ফটো

করোনার সময় যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল, তখন অধিকাংশ শিক্ষার্থী ঘরবন্দি হয়ে মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্থ ছিলেন। ঠিক তখনই উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় CS-50 কোর্সটি করেছে ফ্রিতে।

শুধু এই কোর্সটি নয়; হাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা হার্ভার্ড, এমআইটি, স্টানফোর্ডের মত বিশ্বের ২০০টির বেশি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং গুগল, মাইক্রোসফট, আইবিএমের মত বিশ্বসেরা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ৪ হাজারের বেশি কোর্স সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করার সুযোগ পেয়েছে। ‘Coursera’ ‘edx’ Udemy, DataCamp এর মতো কয়েকটি Massive Open Online Course (MOOCs) প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এই সুযোগটাকে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, করোনাকালে প্রায় ১০ হাজার মতো শিক্ষার্থী ৪০ হাজারেরও বেশি অনলাইন কোর্সে ভর্তি হয়েছে এই সময়ে এবং ৭০ হাজারের মত পাঠ শেষ করেছে ৫০ হাজার ঘন্টারও বেশি লেখাপড়া করে। এই পুরো ব্যাপারটি সম্ভব হয়েছে হাবিপ্রবির ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. জুয়েল আহমেদ সরকারের নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে।

শিক্ষার্থীদের উন্মুক্ত এই প্ল্যাটফর্মগুলোর সুবিধা পৌঁছে দিতে এই শিক্ষক Bangladesh Open Learning Society নামে ১০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন ফেসবুকভিত্তিক একটি লার্নিং কমিউনিটি। এই উন্মুক্ত শিক্ষার সুযোগগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয়ার কারণে তারা দক্ষতা বৃদ্ধিতে একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারছে নানাভাবে। উন্মুক্ত শিক্ষার প্ল্যাটফর্মগুলোতে সুযোগ তৈরির পাশাপাশি এই লার্নিং কমিউনিটির সদস্যরা নিজেরাও পরিবেশ, ইতিহাস, শেখার বিজ্ঞানসহ নানা বিষয়ে সমন্বিত অধ্যায়নের কয়েকটি গ্রুপ পরিচালনা করছে।

মো. জুয়েল আহমেদ সরকারের কাছে তার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে জানান, প্রযুক্তির পরিবর্তনের দ্রুত গতির সাথে সাথে আমাদের কর্মবাজারসহ উন্নয়নের বিভিন্ন দিক ব্যাপক পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রযুক্তিগত দক্ষতায় পিছিয়ে থাকলে তৈরি হতে পারে ডিজিটাল ডিভাইড। এগিয়ে থাকতে তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রযুক্তির সর্বশেষ দক্ষতাগুলো থাকতে হবে নখদর্পণে। বিশ্বব্যাপী এই দক্ষতাগুলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশ ভালো কিছু প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। আমি শুধু ওইগুলোর সাথে আমাদের শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিতে চেয়েছি। আর উত্তরের জনপদে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জ্ঞান ছড়ানোর বাতিঘর হলো হাবিপ্রবি। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি বাংলাদেশে প্রযুক্তিগত বৈষম্য (ডিজিটাল ডিভাইড) কমানোর ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দারুণ কিছু করে দেখাতে পারে।

তিনি আরও জানান, করোনার আগে বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর কাছেই অনলাইন কোর্সের ব্যাপারটা এতো পরিচিত ছিলো না।

এত সংখ্যক শিক্ষার্থীকে অনলাইনে উন্মুক্ত শিক্ষার দুনিয়ায় কিভাবে সম্পৃক্ত করতে পারলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমে ব্যাপারটা ছিলো খুব কঠিন। অনলাইনে কোর্স কি? আর এটি কিভাবে করা যায় এবং এই কোর্সগুলো কি কাজে লাগতে পারে; এটি বুঝাতেই অনেক সময় লেগেছে। করোনার সময়টাতে প্রায় ২৪/৭ আমাকে অনলাইনে থাকতে হয়েছে। ফেসবুক লাইভ, ওয়ার্কসপের মত নানা ধরণের কার্যক্রমের মাধ্যমে উন্মুক্ত শিক্ষার বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদেরকে বোঝাতে হয়েছে। শিক্ষার্থীদেরকে অনলাইন লার্নিং বিষয়েও বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিতে হয়েছে। এই পুরো কাজটি আমার পক্ষে একা করা কোনো ভাবেই সম্ভব ছিলো না। আমি আমার সহকর্মীদের সহায়তা পেয়েছি এবং পাশাপাশি হাবিপ্রবির একঝাঁক শিক্ষার্থী পুরো ব্যাপারটিতে দারুণভাবে সহায়তা দিয়েছে। এমনও হয়েছে কোর্সে অন্তর্ভুক্তির শেষ তারিখে আমরা সারারাত জেগে অনলাইনে থেকে শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করেছি। তবে এত কষ্টের পরেও আমি দারুণ খুশি। একটি সুযোগ পেলে যে আমাদের শিক্ষার্থীরা দারুণ কিছু করে দেখাতে পারে এই সময়ে বেশ ভালোভাবে উপলব্ধি করেছি।

অনলাইন কোর্স এবং উন্মুক্ত শিক্ষা নিয়ে তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ আমাদের সামনে অবারিত সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে এবং এর জন্য প্রয়োজন প্রতিনিয়তই শেখা। যেটাকে লাইফ লং লার্নিং বলা হয়ে থাকে। তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি উন্মুক্ত শিক্ষার প্ল্যাটফর্মগুলোর বিকল্প নেই। আমার ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সকল শিক্ষার্থী; বিশেষত প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদেরকে এই সুযোগগুলোর সাথে বেশি করে সম্পৃক্ত করা।