১৯ নভেম্বর ২০২১, ১৩:০৭

ভর্তিতে জিপিএ নম্বরের কাছে মূল্যহীন পরীক্ষার স্কোর

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিতে মেধাক্রম নির্ণয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জিপিএতে ১০০ নম্বর ধরা হয়েছে। এতে ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত স্কোরের সঠিক মূল্যয়ন হচ্ছে না বলে অভিযোগ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ও ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব জসিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মেধা তালিকা তৈরি করা হবে ২০০ নম্বরের ভিত্তিতে। এতে ১০০ নম্বর ভর্তি পরীক্ষা ও ১০০ নম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট এর ভিত্তিতে। বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়েছে, ইউনিট ভিত্তিক নির্ধারিত আবেদন ফি ৬০০ টাকা এবং আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু করে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন চলবে।

২০২০-২১ সেশনে প্রথমবারের মত জিএসটি গুচ্ছভুক্ত স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। এতে করোনা পরিস্থিতিতে বোর্ড পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব না হওয়ায় অটোপাশ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া এবারের ভর্তি পরীক্ষায় সেকেন্ড টাইম অংশ নেয়া অন্য সেশনের শিক্ষার্থীরা উচ্চ মাধ্যমিকে কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে উত্তীর্ণ হয়।

মেধাক্রম তৈরির এ পদ্ধতি বৈষম্যের সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। ভিন্ন পদ্ধতিতে উত্তীর্ণ হওয়া উচ্চ মাধ্যমিকের দুই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই জিপিএ নম্বর অনেক বড় ব্যবধান তৈরি করবে বলে তারা মনে করছেন। তাদের মতে, জিপিএ মার্ক স্বল্প হলে ভর্তি পরীক্ষা স্কোর ভালোভাবে মূল্যয়ন পেত, এক্ষেত্রে জিপিএ নম্বর মেধা তালিকায় বেশি দূরত্ব তৈরি করতো না। এখন জিপিএ নম্বর অত্যাধিক রাখার ফলে মেধা তালিকায় এটি তাদের অধিক পিছিয়ে দেবে। এটি ভর্তি পরীক্ষা স্কোরের মূল্যয়ন কমিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

জিএসটি ভর্তি পরীক্ষায় ৬২.৫ স্কোর পেয়েছে তানভীর শরিফ নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, জিপিএর উপর ১০০ নাম্বার রাখা আমি অযৌক্তিক মনে করছি। এখানে মূলত জিপিএর নাম্বার দিয়েই মেরিট পজিশন নির্ধারণ করা হচ্ছে। ৬২.২৫ পেয়েও আমি ৪৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি শুধু মাত্র জিপিএর উপর ১০০ নাম্বার রাখার কারণে। তাহলে গুচ্ছ ভর্তি পরিক্ষা নেয়ার যৌক্তিকতা কি? তাছাড়া এবার যেহেতু এইচএসসিতে অটো পাশ দিয়েছে এতে সঠিক মেধার মূল্যায়ন হয়নি, তাই বিতর্কিত রেজাল্টের উপর নাম্বার রাখা আদৌ ঠিক মনে করিনি।

নুর মোহাম্মদ আতিক নামে আরেক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী বলেন, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ২০ এর বেশি জিপিএ মার্ক রাখেনি সেখানে নোবিপ্রবি ১০০ ধরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জিপিএ বেজড করে ফেলবে নাকি? এখন একজন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় পেলো ৩০ তার জিপিএতে আছে ১০০ আরেকজন পরীক্ষায় পেলো ৫০ তার জিপিএতে আছে ৭৫ তাহলে ৩০ পাওয়া শিক্ষার্থী এগিয়ে গেলো না? এটা'ত চরম বৈষম্য। পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ফলো করবে কেন? এবছর অটো পাস, ভুরিভুরি জিপিএ ফাইভ, এটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিবেচনা করা উচিত!

জিপিএ ১০০ নম্বর যৌক্তিক উল্লেখ করে নোবিপ্রবির সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহবায়ক ও বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিম হোসেন বলেন, ভর্তি কমিটি আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। করোনার কারনে শিক্ষার্থীরা এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিতে না পারলেও এসএসসি পরীক্ষার সময় তারা পড়াশোনা করেই পরীক্ষা দিয়েছে সেই দিক বিবেচনায় আমরা জিপিএ কে গুরুত্ব দিয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের আলোচনায় এটি যৌক্তিক মনে হয়েছে বিধায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখন ভর্তিচ্ছুদের প্রতিক্রিয়ায় কমিটি মনে করলে বিষয়টি নিয়ে আবার বসে আলোচনা করবে। সেখানে কমানো দরকার মনে হলে পরিবর্তন হবে, অন্যথায় এটিই থাকবে।

অটোপাশ হলেও তাদের জিপিএ ভ্যালুলেস নয় উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, পূর্বের রেজাল্টের ভিত্তিতেই তাদের এইচএসসির রেজাল্ট হয়েছে। যেহেতু তারা পূর্বে ভালো করেছে এখানেও তাদের ফলাফল ভালো হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে পুনরায় একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী ভর্তি কমিটির আহবায়কের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।

বিষয়টি নিয়ে ভর্তি কমিটি ভালো বলতে পারবেন বলে জানান নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. দিদার-উল-আলম। তবে যেহেতু শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, তাদের বিষয়টি নিয়ে আবার আলোচনা পর্যালোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। আলোচনা করে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানান উপাচার্য।