বিশ্ব বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো হলেন বশেমুকৃবি’র অধ্যাপক ড.তোফাজ্জল
বিশ্ব বিজ্ঞান একাডেমি (টিডব্লিউএএস) এর ফেলো নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইবিজিই) এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম।
গতকাল সোমবার (১ নভেম্বর) বিশ্ব বিজ্ঞান একাডেমির সদর দপ্তর ইতালি থেকে সংস্থাটির সভাপতি এবং নির্বাহী পরিচালক প্রেরিত এক অভিনন্দন বার্তায় অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলামকে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতি বছর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশ্ব জ্ঞানভান্ডারে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ বিশ্ব বিজ্ঞান একাডেমির ফেলোদের ভোটে নতুন ফেলো নির্বাচন করা হয়। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে তিনি আজীবনের জন্য বিশ্ব বিজ্ঞান সংস্থাটির ফেলো হিসেবে উন্নয়নশীল দেশসমূহের বিজ্ঞান উন্নয়নে কাজ করবেন। আগামী বছরের শুরুতে ইতালিতে নতুন ফেলো হিসেবে তার অভিষেক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশে আধুনিক বায়োটেকনোলজির প্রয়োগে কৃষিতে একটি নতুন বিপ্লব সাধনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম। ২০১৬ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৮ জেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে ঘটে যাওয়া গমের মহামারীর সংকটকালে তিনিই প্রথম রোগজীবাণু ছত্রাকটির জীবনরহস্য বিশ্লষণের মাধ্যমে গমের শত্রু চিহ্নিত করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ঐ যুগান্তকারী গবেষণায় তিনি চারটি মহাদেশের ৩১ জন বিজ্ঞানীকে সম্পৃক্ত করে একটি জাতীয় সমস্যার সমাধান করেন।
তার এ আবিষ্কারের ফলে রোগটির মোকাবেলা করার জন্য কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ দেওয়ায় পরবর্তী বছর গম ফসলের ক্ষতি হ্রাস করা সম্ভব হয়। বর্তমানে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকী গমের ব্লাস্ট রোগটি মোকাবেলায় তিনি জিন এডিটিং, ন্যানোটেকনোলজি, প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াসহ আধুনিক বায়োটেকনোলজি প্রয়োগে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছেন। সম্প্রতি তিনি গমের ব্লাস্ট রোগ দ্রুত শনাক্তকরণের জন্য একটি সহজ জীবপ্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন যা বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের গম আমদানি-রপ্তানিতে (সঙ্গনিরোধে) গবেষণায় এবং কৃষকের মাঠে ব্যাপক ব্যবহার হবে। এ ছাড়াও তিনি ধান,গম এবং স্ট্রবেরিতে রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে সাশ্রয়ী প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া প্রযুক্তি আবিষ্কার করে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ভেষজ উদ্ভিদ এবং অণুজীব থেকে এ পর্যন্ত তিনি ৫০টির অধিক রোগজীবাণু প্রতিরোধী নতুন প্রাকৃতিক যৌগ বা এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেছেন।
সম্প্রতি স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের প্লস বায়োলজিতে প্রকাশিত বিজ্ঞানীদের ডাটাবেস সম্পর্কিত এক প্রবন্ধে তিনি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ দুই শতাংশ বিজ্ঞানীদের একজন এবং বাংলাদেশে জীবপ্রযুক্তি,কৌলিতত্ত্ব এবং অণুপ্রাণবিজ্ঞানে দেশের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীর স্থান লাভ করেন।
অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম ১৯৬৬ সালের ২০ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার শশই গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। অধ্যাপনা এবং গবেষণায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ইতোপূর্বে অধ্যাপক তোফাজ্জল ২০১৬ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো নির্বাচিত হন। মৌলিক গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ দেশে-বিদেশে তিনি অনেক পুরষ্কার, গোল্ড মেডেল এবং এওয়ার্ড লাভ করেন। জীববিজ্ঞানে অসামান্য অবদানের জন্য জ্যেষ্ঠ ক্যাটাগরিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী স্বর্ণপদক-২০১১ (২০১৪ সালে প্রদত্ত), এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ইসলামিক ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে আইডিবি ইনোভেশন এওয়ার্ড-২০১৮, রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ভোকেশনাল এক্সিলেন্স এওয়ার্ড-২০১৭, জীবন রহস্য বিশ্লেষণ পূর্বক গমের ব্লাস্ট রোগের উৎপত্তিস্থল নির্ণয়ের জন্য কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট থেকে কমনওয়েলথ ইনোভেশন এওয়ার্ড-২০১৯, কেআইবি বেস্ট প্রেজেন্টার পুরস্কার-২০১৬, কৃষি বিজ্ঞানে মৌলিক গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পরপর দু’বার (২০০৪ এবং ২০০৭) বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক গবেষণা এওয়ার্ড এবং জাপানের জেএসবিবিএ শ্রেষ্ঠ তরুণ বিজ্ঞানী পদক-২০০৩ উল্লেখযোগ্য।