২২তম বছরে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক সন্তোষে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেন। শুরু হয় দেশের ১২তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা।
মাওলানা ভাসানী তার জীবদ্দশায় সন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিলেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এর কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। মৃত্যুর পর তার মাজার প্রাঙ্গণে তারই নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়।
মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে অগ্রণী ভুমিকা পালন করেন। তিনিই ১৯৫৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কাগমারী সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করতে পারেননি।
অবশেষে ১৯৭০ সালে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৭০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মাওলানা ভাসানী ‘আমার পরিকল্পনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়’ শিরোনামে লিখিত নিবন্ধের মাধ্যমে তাঁর প্রস্তাবিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত প্রস্তাব করেন। তিনি জীবদ্দশায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি, কিন্তু তিনিই মূলত বিশ্ববিদ্যালয় কাজ শুরু করে যান। তাই তাঁর নামেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়।
২০০২ সালের ২১ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইউসুফ শরীফ আহমেদ খানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০০৩-২০০৪ শিক্ষাবর্ষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অধীনে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজির দুটি বিভাগে ৮৩ জন শিক্ষার্থী এবং ৫ জন শিক্ষক নিয়ে ২০০৩ সালের ২৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রায় ছয় মাস পর এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এবং ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ দুটি খোলা হয় লাইফ সায়েন্স অনুষদের অধীনে। এরপর ধারাবাহিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বিকশিত হতে থাকে। বর্তমানে ৬টি অনুষদভুক্ত ১৮টি বিভাগ বর্তমানে সেমিস্টার পদ্ধতিতে ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ হাজারেও বেশি এবং কর্মরত শিক্ষক ২ শতাধিক।
শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টি চরম অবকাঠামো সংকটে ভুগতে থাকে। ট্রাস্টি বোর্ডের প্রায় ৫৭ একর জমিসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ সরকারি নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হলেও এর খুব সামান্য অংশই ব্যবহার করা গেছে। পুরোনো দালানকোঠাগুলো প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী ছিল।
এ ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি বেশকিছু পুরোনো প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাসজুড়ে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে। শুরুর দিকে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাঙ্খিত মাত্রায় হয়নি। ছাত্রছাত্রীদের আবাসন সংকট ছিল চরমে। এমনকি একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রেও প্রয়োজনমতো জায়গা বরাদ্দ দেওয়া যায়নি। ধীরে ধীরে এ সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা চলতে থাকে।
এ সকল সমস্যা সমাধানে ও মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা, প্রশাসন ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ২০১৬ সালে প্রণীত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী “মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শক্তিশালীকরণ”-শীর্ষক প্রকল্পটি মোট ৩৪৫৭৭.০০ লক্ষ (তিনশত পঁয়তাল্লিশ কোটি সাতাত্তর লক্ষ) টাকা ব্যয়ে জুলাই ২০১৬ থেকে জুন ২০১৯ মেয়াদে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় ২৫ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে অনুমোদন লাভ করে। পরবর্তীতে জুলাই ২০১৬ থেকে জুন ২০২২ মেয়াদে সংশোধন আকারে অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ছয়টি অনুষদ, প্রশাসনিক ভবন, সাতটি আবাসিক শিক্ষার্থী হল (২টি নির্মানাধীন), কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, খেলার মাঠ, চিকিৎসাকেন্দ্রে, ব্যায়ামাগার, বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভ, প্রত্যয় ‘৭১ ভাস্কর্য, শহীদ মিনার, মুক্তমঞ্চ ইত্যাদি অবস্থিত। আরো নির্মাণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে- ১২তলা বিশিষ্ট একাডেমিক-কাম-রিসার্চ ভবন, ১০তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক এনেক্স ভবন, ৫ তলা পর্যন্ত মাল্টিপারপাস ভবন, সিনিয়র শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য ৫ তলা ভবন।
এছাড়াও ক্যাম্পাসের অধিভুক্ত জায়গার ভেতরই মাওলানা ভাসানীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে নির্মিত ঐতিহাসিক দরবার হল, প্রখ্যাত সুফি সাধক পীর শাহ্ জামানের নামানুসারে পীর শাহ্ জামান দীঘি, মাওলানা ভাসানীর মাজার, ভাসানী জাদুঘর একটি মসজিদসহ আরো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই অধিভুক্ত জায়গা ছাড়াও সন্তোষের অদূরে রথখোলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-সম্পত্তি রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন
নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) সকাল ১০টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. এ আর এম সোলাইমান এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. সিরাজুল ইসলাম, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, রেজিস্ট্রার ও ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহবায়ক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মোকাদ্দেছ আলী।
পরে ভাইস-চ্যান্সেলরের নেতৃত্বে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এরপর ভাইস-চ্যান্সেলরের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও মাওলানা ভাসানীর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে মোনাজাত করেন এবং প্রশাসনিক ভবনের সামনে কেক কাটেন। এছাড়া বাদ জোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
সব কর্মসূচিতে অনুষদের ডিন, রেজিস্ট্রার, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, হল প্রভোস্ট, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণি কর্মচারী সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতারা অংশগ্রহণ করেন।