অনলাইনে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেছে চুয়েট শিক্ষার্থীরা
অনলাইনে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। করোনা মহামারীর সময় থেকে প্রায় ১৭ মাস পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অনলাইন ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
চলমান ব্যাচগুলোর মধ্যে ২য় বর্ষ অর্থাৎ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা লেভেল ২ এর ১ম সেমিস্টারের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি। এদিকে ৩য় বর্ষ (২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) এবং ১ম বর্ষের (২০১৯-২০) শিক্ষার্থীরাও এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা যায়। রুটিন অনুযায়ী আজ সোমবার (৪ অক্টোবর) ৩য় বর্ষের ১ম সেমিস্টার পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীরা তা বর্জন করেছে।
আগামীকাল ৫ অক্টোবর ১ম বর্ষের ১ম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
অনলাইনে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা গ্রহণ করতে চুয়েট প্রশাসন কর্তৃক প্রদত্ত কঠোর নীতিমালার প্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে দাবী করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় থাকতে হবে। পাশাপাশি পরীক্ষা শুরুর ৫ মিনিট পূর্বে জুম ক্লাস লিংকে জয়েন করতে না পারলে পরীক্ষার্থী সেই পরীক্ষায় যোগদানে ব্যর্থ বলে গণ্য হবে। পরীক্ষা চলাকালীন পুরো সময়ে পরীক্ষার্থীদেরকে ভিডিও ক্যামেরা অন রেখে এমন অবস্থান নিতে হবে যাতে পুরো টেবিলসহ একজন পরীক্ষার্থীর যাবতীয় কর্মকাণ্ড অবলোকন করা যায়। শিক্ষার্থীদের দাবি, এমন নানান শর্তের বেড়াজালে কোনো সমাধান না পেয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ল্যাব ক্লাস, অনলাইন ভাইভা, কুইজ পরীক্ষা শেষ হয়েছে গত সেপ্টেম্বর মাসের ২৫ তারিখ। কোন কোন বিভাগে শেষ হতে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এমন পরিস্থিতির পর মাত্র তিন বা চার দিনের পড়াশোনায় ভালো প্রস্তুতি সম্ভব না হওয়ায় তারা পরীক্ষা বর্জন করেছে।
করোনা মহামারীর পর এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে স্বশরীরে পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে সেখানে চুয়েট প্রশাসনের অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের হতাশ করছে বলেও জানায় অনেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ল্যাব কার্যক্রম নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। মেকাপ ক্লাস নেবার কথা থাকলেও শিক্ষকদের সদিচ্ছার অভাবে শিক্ষার্থীরা রিভিশন ক্লাস করতে পারেনি এবং অনেক বিষয়ের সিলেবাস এখনো শেষ করা হয়নি৷ এরকম পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা অসম্ভব ছিল৷ আমরা এসব বিষয়ের দ্রুত সমাধান চাই এবং পরীক্ষার জন্য বাস্তবসম্মত একটি নীতিমালা চাই ।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঠিক সিদ্ধান্ত ও নীতিমালার জন্যই চুয়েট পিছিয়ে যাচ্ছে। যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে চুয়েটেও স্বশরীরে ক্লাস পরীক্ষা শুরু করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও এগিয়ে আসতে হবে। স্বশরীরে পরীক্ষাও গ্রহণ করা যাবে, একাডেমিক কার্যক্রম পুনরায় গতি প্রাপ্ত হবে।
এদিকে পরীক্ষা বর্জন করার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের পক্ষে ভালো প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে ও পরবর্তীতে কী সিদ্ধান্ত আসতে পারে এমন প্রশ্নে উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীরা যে দাবী নিয়ে পরীক্ষা বর্জন করেছে তা আমরা ভেবে দেখেছি। তারা পরীক্ষায় দিলে সেটা তাদের জন্য ভালো ফল আনত। করোনায় যে সময়ের গ্যাপ হয়েছে তা কমিয়ে আনতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে একাডেমিক কাউন্সিল। যেহেতু তারা অংশগ্রহণ করেনি, এর পরের সিদ্ধান্ত একাডেমিক কাউন্সিল নিবে। ডীন কমিটি ও বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে আলোচনা শেষে বিস্তারিত জানানো যাবে।