সার্টিফিকেট উত্তোলনে ভোগান্তির শিকার বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

স্নাতক কিংবা স্নাতোকত্তর সম্পন্ন করে প্রবেশনারি সার্টিফিকেট উত্তোলন করতে গিয়ে প্রায়ই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে তারা পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাচ্ছেন না। সার্টিফিকেট উত্তোলনের আবেদনের পর অযৌক্তিভাবে সময়ক্ষেপণ করা হয়।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী মাকসুমুল আরেফিন বলেন, `আমি গত ২৯ আগস্ট সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করি, এরপর মোট ৫ বার সার্টিফিকেটের জন্য গেলেও প্রতিবারই বলা হয়েছে প্রিন্টার নষ্ট।'

ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী মনোয়ারা জামান তপু জানান, সার্টিফিকেট উত্তোলনের জন্য আমার এক সপ্তাহ যাবৎ প্রায় প্রতিদিন ১০ থেকে ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে। কয়েক ধাপে হল, লাইব্রেরি থেকে সবশেমুরবিপ্রবি স্বাক্ষর গ্রহণ করার পর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে গেলে তারা তিনদিন অপেক্ষা করতে বলে। কিন্তু তিনদিন পর গেলে জানানো হয় আমার নামে ভুল আছে এবং এটি বিভাগ থেকে ঠিক করতে হবে৷ এরপর বিভাগ থেকে নাম ঠিক করে আনার পর তারা আরও দুইদিন সময় নেয়।’

ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এই প্রক্রিয়া আরও সহজ হওয়া উচিত। কারণ যারা ইতোমধ্যে পড়ালেখা শেষ করেছেন তাদের পক্ষে তো এভাবে সার্টিফিকেট নিতে এসে দিনের পর দিন গোপালগঞ্জে থাকা সম্ভব নয়।’

এ বিষয়ে কথা বলতে ২২ এবং ২৩ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসে গেলে দেখা যায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম গোলাম হায়দার এবং উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মিকাইল ইসলাম উভয়ই অনুপস্থিত। পরবর্তীতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের সহকারী প্রোগ্রামার আবদুল মুমিত জানান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ছুটি নিয়ে ঢাকায় গিয়েছেন এবং উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শারীরিক অসুস্থতার কারণে ছুটিতে রয়েছেন। এ সময় ২২ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে এক শিক্ষার্থীকে সার্টিফিকেটের জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় দেখা যায়।

অপেক্ষারত শিক্ষার্থী বেলাল হোসেন বিদ্যা বলেন, ‘আমাকে তিনদিন যাবৎ অপেক্ষা করানো হচ্ছে। গতকাল উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেছিলেন আজ সার্টিফিকেট পাবো। কিন্তু আজ এসে দেখি তিনি অফিসে নেই। আমাকে আবার আগামী সপ্তাহে আসতে বলা হয়েছে।’

এ বিষয়ে মুঠোফোনে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম গোলাম হায়দারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা সব সময় শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদানের এবং দ্রুত সময়ে সার্টিফিকেট প্রদানের চেষ্টা করি। কিছুদিন যাবৎ আমাদের প্রিন্টার নষ্ট থাকায় আমরা মার্কশীট দিতে পারছি না, তবে সার্টিফিকেট দিচ্ছি। ঢাকায় আসার পূর্বেও আমি সার্টিফিকেটে সাক্ষর করে এসেছি, এখন প্রোগ্রামার যদি কোনো আবেদনপত্র আমাকে না দেন সে ক্ষেত্রে তো আমার কিছু করার নেই।’

এ বিষয়ে সহকারী প্রোগ্রামার আবদুল মুমিত বলেন, ‘আমি প্রতিটি আবেদনই যথাযথ প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের নিকট পৌঁছে দেই। সর্বশেষ এক শিক্ষার্থী উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের নিকট সার্টিফিকেটের জন্য যোগাযোগ করে। উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ওই দিন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাৎক্ষণিকভাবে বাসায় চলে যান এবং সার্টিফিকেটের বিষয়টি আমাকে জানানোর সুযোগ পাননি একারণে আমিও বিষয়টি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে জানাতে পারিনি। শিক্ষার্থীরা হয়রানির শিকার হোক এটা আমরা কখনও চাই না’

এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শুধুমাত্র প্রবেশনারী সার্টিফিকেট দেয়া হচ্ছে। মূল সার্টিফিকেট সমাবর্তনের পর দেয়ার কথা রয়েছে। এখন পর্যন্ত মূল সার্টিফিকেটের ডিজাইন পর্যন্ত করা হয়নি। আমি যোগদানের পর এই নিয়ম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেই। কোন শিক্ষার্থী চাইলে যাতে সমাবর্তনের আগেও মূল সার্টিফিকেট নিতে পারে সেই উদ্যোগ গ্রহণ করছি। ইতোমধ্যে মূল সার্টিফিকেটের ডিজাইন করারও নির্দেশ দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কোনো ক্রমেই কাম্য নয়। কোন শিক্ষার্থী যদি ভোগান্তির শিকার হয় এবং আমার নিকট অভিযোগ করে তাহলে আমি অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’


সর্বশেষ সংবাদ