ছাত্রী হলের প্রভোস্ট নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট, বশেমুরবিপ্রবি ছাত্রকে শোকজ
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) বঙ্গমাতা হলের সদ্য বিদায়ী প্রভোস্ট শামস আরা খাঁনকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইয়ামিনুল হাসান আলিফের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত রয়েছেন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী প্রভোস্ট শামস আরার অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত ওই শিক্ষার্থীর নিকট লিখিতভাবে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
উপ-রেজিস্ট্রার মো: মোরাদ হোসেন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, “বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল”-এর সদ্য বিদায়ী প্রভোস্ট এবং ফার্মেসী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামস আরা খাঁন-এর বিরুদ্ধে গত ৩১ আগস্টে কিছু বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট করেছেন, যা তার শারীরিক ও নিপীড়নের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং এমন পোস্টের কারণ তথ্য-উপাত্তসহ চিঠি পাওয়ার ৩ কার্য দিবসের মধ্যে এই বিষয়ে লিখিত জবাব রেজিস্ট্রার দপ্তরে প্রদানের জন্য বলা হলো।”
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী প্রোভোস্ট শামস আরা বলেন, গত ৩০ আগস্ট রাতে বঙ্গমাতা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী পরিচয়ে একটি মেয়ে আমাকে ফোন করে জানায় তার একজন রুমমেট হলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতে গিয়ে তাকে জানিয়েছে তাদের রুমে চুরি হয়েছে। এসময় আমি তাকে জানাই গতকাল কেউ কোন চুরির অভিযোগ লিখিত বা মৌখিক কোনভাবেই করেনি। তখন সে আমাকে বলে মেয়েটি বুঝতে পারেনি, আর সে আগে রুমমেটদের সাথে কথা বলতে চেয়েছে। এরপর আমি তাকে বলি, তারা যেনো কি কি চুরি হয়েছে তার বিবরণসহ একটি লিখিত অভিযোগ অফিসে দেয় এবং রুম পরিদর্শন যেন করা যায় তার জন্য রুমের চাবি নিয়ে হলে আসে। উত্তরে মেয়েটি জানায় তার কি চুরি হয়েছে সেটা সে এখনও জানে না আর এই মুহূর্তে তাদের আসা সম্ভব না, সে শুধু হল কর্তৃপক্ষকে একটু সতর্ক হওয়ার জন্য বলতে চাচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে আমি তাকে জানাই হল কর্তৃপক্ষ হলের সার্বিক নিরাপত্তায় শতভাগ দায়িত্ব পালন করছে। আবাসিক রুমের শিক্ষার্থীদের কাছেই তাদের নিজেদের রুমের চাবি থাকে, তাই রুমে শিক্ষার্থী ব্যতীত অন্যদের প্রবেশের সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় কোন চুরির ঘটনার সুরাহার জন্য ঐ রুমের শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগ এবং তাদের উপস্থিতি প্রয়োজন, নয়তো হল কর্তৃপক্ষ রুমে প্রবেশ করতে পারবে না। এরপর মেয়েটি আর কথা না বাড়িয়ে বিদায় জানায়।
“কিন্তু ৩১ আগস্টে কে এম ইয়ামিনুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে বঙ্গমাতা হলে চুরির ঘটনা ঘটেছে এবং প্রভোস্টের কাছে অভিযোগ করা হলেও তিনি চুরির দায় শিক্ষার্থীদের ওপর চাপাতে চেয়েছেন। এছাড়া ওই শিক্ষার্থী আরও দাবি করেন বঙ্গমাতা হলের শিক্ষার্থীরা আমার অপসারণ/পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে এমন কিছুই ঘটেনি।”
তিনি আরও বলেন, করোনার সময়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪-৫ টির মত চুরির অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিলো পোশাক কিংবা কসমেটিকস চুরির মত বিষয়। এক্ষেত্রে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণেরও পরামর্শ দিয়েছি। এছাড়া চুরি প্রতিরোধে হলে প্রবেশের সময় লিখিত আবেদন করা সহ মালামাল নিয়ে বের হওয়ার সময় মালামালের তালিকা রাখার নিয়ম চালু করেছি।
শারীরিক এবং মানসিক নিপীড়নের বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক বলেন, বিষয়টি এমন নয় যে আমাকে সরাসরি শারীরিকভাবে আঘাত করা হয়েছে। আমি বর্তমানে প্রায় ৩৭ সপ্তাহের গর্ভাবস্থায় রয়েছে। গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই চিকিৎসক আমাকে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বনের পাশাপাশি মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সম্প্রতি আমার হিমোগ্লোবিন লেভেল ৮% এ নেমে আসায় আমাকে তিন ব্যাগ ব্লাড গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়। এমতাবস্থায় গত ২৬ আগস্ট আমি মাতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন করি এবং ৩১ তারিখে যখন আমাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনসহ দায়িত্বমুক্ত করার কথা সেই দিনই আমার অপসারণ দাবি করা হচ্ছে এমন বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর পোস্ট দেখে আমি মানসিক চাপের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ি।
“আমার রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এর ফলে আমার পক্ষে আর ব্লাড গ্রহণ করাও সম্ভব হয়নি। এক কথায় এই ঘটনার কারণে আমাকে এবং আমার অনাগত সন্তানকে শারীরিক জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। আর এ কারণে আমি শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টি উল্লেখ করে অভিযোগ দিয়েছি।”
চুরির বিষয়ে বঙ্গমাতা হলের স্টাফ জেসমিন নাহার রুনা বলেন, সম্প্রতি লিখিত আবেদন করে ৪০২নং কক্ষের একটি মেয়ে তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে হলে আসে। এসময় তার কাছে রুমের চাবি না থাকায় রুমের অপর তিনজনের অনুমতি নিয়ে সে তালা ভেঙে রুমে প্রবেশ করে এবং মালামাল নিয়ে চলে যায়। এসময় সে মৌখিক বা লিখিত কোনোভাবেই চুরির অভিযোগ করেনি। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চুরির বিষয়টা জানতে পারি।
চুরির অভিযোগ সম্পর্কে অভিযোগকারী রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইভা আক্তার স্বর্ণা বলেন, আমি আমার রুমের আরেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে চুরির বিষয়টা জানতে পারি। কিন্তু আমাদের রুমের চারজনেরই পারবারিক এবং একাডেমিক কারণে ব্যস্ত থাকায় আমাদের পক্ষে এই মুহুর্তে গোপালগঞ্জে গিয়ে কি কি চুরি হয়েছে সেটি নিশ্চিত করা কিংবা লিখিত অভিযোগ দেয়া সম্ভব নয়। আমরা মূলত ম্যামকে অভিযোগটি জানিয়েছিলাম যাতে প্রশাসন আরও সতর্ক হয়, আর কোনো চুরির ঘটনা না ঘটে এবং আমাদের কক্ষেরই কোনো শিক্ষার্থীর ওপর দায়ভার না আসে।
প্রভোস্টের অপসারণ চেয়েছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই শিক্ষার্থী বলেন, আমরা এ ধরণের কিছু বলিনি। আমরা শুধুমাত্র চেয়েছি চুরির ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। কে প্রভোস্টের দায়িত্বে থাকবে বা কে থাকবে না এটি আমাদের দেখার বিষয় নয়।
এদিকে, হল প্রভোস্ট শামস আরা খানের অপসারণ বা পদত্যাগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট কোনো শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়েছিলো কিনা এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে উপ-রেজিস্ট্রার মো: মোরাদ হোসেন জানান, এমন কোনো দাবি আসেনি।
এ বিষয়ে বঙ্গমাতা হলের একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তারাও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এমন কোনো দাবির বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। এছাড়া, প্রভোস্টের অপসারণ বা পদত্যাগ চেয়ে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো আন্দোলনও করতে দেখা যায়নি।
তবে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী কে এম ইয়ামিনুল হাসান বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের বক্তব্যের ভিত্তিতেই পোস্টটি লিখেছি এবং এ সংক্রান্ত সকল প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। আমি সকল প্রমাণ প্রশাসনের নিকট উপস্থাপন করবো।
এসময় তিনি আরও বলেন, চিঠিতে শারীরিক নিপীড়নের কথা বলা হয়েছে কিন্তু ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে কিভাবে শারীরিক নিপীড়ন হতে পারে? কারো সংস্পর্শে না গিয়েতো তাকে শারীরিক নিপীড়ন তো সম্ভব নয়।
প্রভোস্টকে অপসারণের দাবির বিষয়ে আলিফ বলেন, এই হলে প্রায় ৫টি চুরির ঘটনা ঘটেছে, তাদের মধ্যে একাধিকজনের বক্তব্য নিয়েই আমি এটা লিখেছি। যেহেতু তারা নাম প্রকাশে ইচ্ছুক নয় তাই আমি তাদের নাম প্রকাশ করিনি।