বুয়েটের তৈরি ‘অক্সিজেট’ যন্ত্র প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনতে হাইকোর্টের পরামর্শ

বুয়েটের তৈরি অক্সিজেট নামের যন্ত্রটি ব্যবহারের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতি আদালতের নির্দেশনা চাইলে...
বুয়েটের তৈরি অক্সিজেট নামের যন্ত্রটি ব্যবহারের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতি আদালতের নির্দেশনা চাইলে...  © সংগৃহীত

বেশি পরিমাণে অক্সিজেন স্বল্প মূল্যে সরবরাহ ও উন্নতমানের ভেন্টিলেশন নিশ্চিত করতে করোনা রোগীদের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তৈরি ‘অক্সিজেট’ নামের যন্ত্রটি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনার পরামর্শ দিয়েছে হাইকোর্ট।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে এ পরামর্শ দিয়ে আদালত বলেছেন, অক্সিজেটের ওপর মিডিয়ায় ইতিবাচক প্রতিবেদন পড়েছি। কোভিড তো আমাদের সবার চোঁখ খুলে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অনেক ইনোভেটিভ মাইন্ডের। করোনাকালে যদি নতুন এই যন্ত্রটি জনগণের প্রাণ রক্ষা হয় নিশ্চয়ই বিচার বিবেচনা করে তিনি দেশের স্বার্থে তা ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারেন। এজন্য যন্ত্রটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপনের লক্ষ্যে উনার মূখ্য সচিবকে চিঠি লিখুন।

‘অক্সিজেট’ নামের যন্ত্রটি ব্যবহারের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতি আদালতের নির্দেশনা চাইলে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের ভার্চুয়াল বেঞ্চ আজ সোমবার (৫ জুলাই) এ পরামর্শ দেন।

বুয়েটের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. তওফিক হাসানের নেতৃত্বে একটি দল তৈরি করে অক্সিজেট (OxyJet) নামক একটি নন-ইনভেসিভ সিপ্যাপ (CPAP) যন্ত্র। বায়মেডিক্যাল ডিপার্টমেন্টের তৈরি OxyJet. বুয়েটে তৈরি অক্সিজেট সিপেপ যন্ত্রটি কোন বৈদ্যুতিক সংযোগ ছাড়াই সাধারণ ওয়ার্ডে মিনিটে ৬০+ লিটার অক্সিজেন দিতে পারে (৪০-১০০% ঘনত্ব/FiO2)।

তবে যন্ত্রটির বৃহৎ পরিসরে উৎপাদনের জন্যে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়ে তৈরী হয়েছে দীর্ঘসূত্রিতা। নিয়ম অনুযায়ী কোন মেডিক্যাল যন্ত্র অনুমোদনের জন্য যথাযথ ফ্যাক্টরি ব্যবস্থা (ISO 13485/9001 certified ইত্যাদি) সম্পন্ন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি দ্বারা তৈরী হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি কোন মেডিক্যাল যন্ত্রের অনুমোদন দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে বিলম্বিত হচ্ছে অক্সিজেটের বৃহৎ আকারে উৎপাদন ও কম সময়ে বাজারজাতকরণ।

বিষয়টি আজ হাইকোর্টের নজরে এনে ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, দ্বিতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে অক্সিজেটের। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কয়েকজন করোনা রোগীকে এই যন্ত্র দিয়ে হাই ফ্লো অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ডিজিডিএ এটা ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছে না। তারা বলেছে, কোস্পানির উৎপাদিত পণ্য না হলে অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়।

এ পর্যায়ে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, পত্রিকায় দেখলাম হাই ফ্লো নোজাল ক্যানুলা গত বছর ৫/১০ লাখ টাকায় বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে ৮০/৯০ লাখ টাকা। এ কারণে আমরা সবসময় বিদেশ থেকে সরকারি জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে বেশি আগ্রহী হই। দেশীয় উদ্ভাবিত জিনিসে অতটা আগ্রহী হই না।

আইনজীবী বলেন, হাই ফ্লো নোজাল ক্যানুলার সংকটে প্রাণহানি বাড়ছে। সেক্ষেত্রে অক্সিজেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, এই ধরনের যন্ত্র নিয়ে পাবলিক ক্যাম্পেইন দরকার। আপনি (আইনজীবী) এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দেন।

তখন আদালত বলেন, আমাদের আদেশ ছাড়াই যদি বিষয়টির সুরাহা হয় তাহলো তো ভালো। কারণ সরকারি জিনিসপত্র কেনাকাটা নিয়ে নানা নিয়মনীতি রয়েছে। রয়েছে নানা ঝামেলা। আমরা এখান থেকে বিষয়টি ভালো বা খারাপ দিক কি কি সেটা বুঝতে পারব না।

প্রসঙ্গত, হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ও আইসিউ স্বল্পতার কারণে অনেক রোগীকেই বেশি পরিমাণ অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব হয় না। তখন এর বিকল্প হিসাবে অক্সিজেট ব্যবহার করা হলে চলমান আইসিইউ ও হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার সংকটে এই যন্ত্র করোনা রোগীদের প্রাণ রক্ষায় কাজে লাগবে।


সর্বশেষ সংবাদ