অর্থ লুটের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, অচলাবস্থায় পাবিপ্রবি

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ লোপাট ও চাঁদাবাজির পাল্টাপাল্টি অভিযোগে প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের মুখোমুখি অবস্থানের কোনো সুরাহা হয়নি। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের প্রেক্ষিতে কার্যত অচলাবস্থা বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।

আজ রবিবার (২০ জুন) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস ঘেরাও করে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিজয় কুমার ব্রহ্মকে বের করে দেন পাবিপ্রবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা। তারা প্রধান প্রকৌশলীর অব্যাহতিসহ বিভিন্ন দাবিতে আল্টিমেটামের সময়সীমা পার হওয়ায় কর্মবিরতি পালন করছেন।

অপর দিকে প্রকৌশল দপ্তর থেকে দেওয়া অভিযোগ অনুযায়ী, প্রধান প্রকৌশলী আমিনুল ইসলামকে লাঞ্ছিত করার প্রেক্ষিতে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তদন্ত কমিটি গঠনের সত্যতা নিশ্চিত করে পাবিপ্রবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিজয় কুমার ব্রহ্ম।

তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষের পত্রই আমরা পেয়েছি। প্রকৌশল দপ্তরের লিখিত পত্রে গত ১৫ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আমিনুল ইসলামকে তার কক্ষে গিয়ে লাঞ্ছিত করা, গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া ও পিকনিকের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজে নিয়োজিত ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ করা হয়েছে অফিসার সমিতির নেতাদের বিরুদ্ধে।

তিনি আরও বলেন, অভিযোগগুলো স্পর্শকাতর হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক কামরুজ্জামানকে আহ্বায়ক এবং আমাকে সদস্যসচিব করে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খায়রুল আলম, ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ। তদন্ত কমিটিকে দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

কর্মকর্তাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বলেন, ‘স্মারকলিপির বিষয়েও উপাচার্য মহোদয়কে জানানো হয়েছে। কর্মবিরতির কারণে রবিবার কোনো কাজ হয়নি। সকাল ১১টার দিকে কর্মকর্তারা আমাকে অফিস থেকে বের করে দেওয়ায় আমিও চলে এসেছি’।

পাবিপ্রবি অফিসার্স সমিতির সভাপতি হারুনর রশিদ ডন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলের অর্থ অপচয় রোধ ও চলমান পাঁচ শ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পে নানা অনিয়ম এবং সেসব অনিয়মের বৈধতা দিতে ভুয়া বিল ভাউচারে কর্মকর্তাদের সাক্ষরে বাধ্য করার প্রতিবাদে আমরা প্রধান প্রকৌশলী আমিনুল ইসলামের অব্যাহতি চেয়ে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের দাবিতে কর্ণপাত করেনি।

তিনি বলেন, উপাচার্য রোস্তম আলী স্যার এলে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হলেও, ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত তিনি ক্যাম্পাসেই আসেননি। অচলাবস্থা নিরসনে কোনো উদ্যোগও নেননি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা রবিবার থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছি।

তিনি আরো বলেন, আমাদের অভিযোগের বিষয়ে কোনো সুরাহা না করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রকৌশল দপ্তরের দেওয়া মিথ্যা অভিযোগে তদন্ত কমিটি করেছে। তাদের এমন আচরণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সন্দেহজনক। দুর্নীতির বৈধতা দিতেই তারা পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে।

এ বিষয়ে পাবিপ্রবি উপাচার্য এম রোস্তম আলীর ফোনে দুপুর ৩টায় যোগাযোগ করা হলে, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ জানিয়ে ঘুমিয়ে আছেন বলে ফোন কেটে দেন।

প্রসঙ্গত, উপাচার্য এম রোস্তম আলীর নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে আলোচনায় পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ তুলে তার অব্যাহতি দাবি করেন পাবিপ্রবির প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

বিপরীতে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও প্রধান প্রকৌশলীকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর। তাদের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ