০৮ জুন ২০২১, ১৮:০০

ক্যাম্পাস হত্যাকাণ্ডের প্রথম বিচার পান যিনি

বুয়েটে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার সনি  © ফাইল ফটো

দেশের রাজনীতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সবসময়ই মোক্ষম ময়দান হিসেবে হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ক্যাম্পাসের রাজনীতির বলি হয়ে দলাদলি, রেষারেষি বা অহেতুক শক্তি প্রদর্শন এবং তা থেকে সৃষ্ট সংঘাতে এ পর্যন্ত ঝরে গেছে বহু শিক্ষার্থীর প্রাণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু বকর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আসাদ, তাপস, দিয়াজ কিংবা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারুক হোসেন অথবা বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের কোনোটিরই বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হয়নি। শিক্ষাঙ্গনে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচারে দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ রয়েছে। শুধুমাত্র বুয়েটছাত্রী সাবেকুন নাহার সনি হত্যার বিচার মিলেছে। তবে সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামি পলাতক থাকায় শিক্ষার্থীদের মনে ক্ষোভ রয়েছে।

আজ ৮ জুন সাবেকুন নাহার সনির ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০২ সালের এ দিনে বুয়েট চত্বরে টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে তৎকালীন সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের দুপক্ষের সংঘর্ষে বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের ছাত্রী সনি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। নিম্ন আদালতে মুকিত, টগর ও সাগরের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়। ২০০৬ সালের ১০ মার্চ হাইকোর্ট মুকিত, টগর ও সাগরের মৃত্যুদন্ডাদেশ বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত এসএম মাসুম বিল্লাহ ও মাসুমকে খালাস দেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মোকাম্মেল হায়াত খান মুকিত পালিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ায়। পলাতক রয়েছে নুরুল ইসলাম সাগর ওরফে শুটার নুরু। জেলে রয়েছেন টগর।

বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা যারা এখনও আইনের আওতায় আসেনি। এ কারণে আমাদের মনে কষ্ট ক্ষোভ নিশ্চয়ই রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের কাছে আমাদের আবেদন, যেন দ্রুতই আসামিদেরকে আন্তর্জাতিক নিয়মপদ্ধতি অনুসারে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হয়। এটা করা হলেই তবে নিহতের আত্মা শান্তি পাবে।’

আরও পড়ুন: ১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে ইউজিসির সতর্কতা

ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের টেলিটক শাখার সভাপতি প্রকৌশলী রনক আহসান ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘২০০২ সালের এই দিনে বুয়েটে ক্যাম্পাস থেকে হলে ফেরার সময় ছাত্রদলের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে গুলিবিদ্ধ হন সাবেকুন নাহার সনি। ২০২১ সালেও সনি হত্যার বিচারকাজ শেষ হয়নি। ছাত্রদলের মুকি, সাগর, টগর ও অন্যান্য সন্ত্রাসীদের মধ্যে অনেকেই বিদেশে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছে, আর দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে সনি'র পরিবারের সুবিচারের প্রত্যাশা।’

এদিকে, ২০১৩ সালে বুয়েটে এক সন্ত্রাসীর এলোপাতাড়ি কোপে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফ রায়হান দ্বীপ গুরুতর আহত হন। দীর্ঘদিন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। দ্বীপ হত্যা মামলায় স্থাপত্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মেজবাহ গ্রেপ্তার হন। এখন পর্যন্ত তিনি কারাগারে আছেন।

সবশেষ ঘটনায় ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর গভীর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। বুয়েটের শেরেবাংলা হলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলের অনুসারী একদল নেতাকর্মী তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। এরই মধ্যে আবরার হত্যার অভিযোগে পুলিশ ১৬ জনকে আটক করেছে।