২৯ মে ২০২১, ১৫:৪৭

নোবিপ্রবিতে নিয়োগে বিধি লঙ্ঘন, বিবিএর ডিন হলেন ফার্মেসির অধ্যাপক

নোবিপ্রবি  © ফাইল ছবি

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ও বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ড. সেলিম হোসেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে বলে জৈষ্ঠ শিক্ষকদের অভিযোগ।

গত ৫ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আগামী ২ বছরের জন্য অধ্যাপক সেলিম হোসেন এই পদে নিয়োগ পান। বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত ২০০১ সনের ৪১ নং আইন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনকল্পে প্রণীত আইন অনুসারে তার এই নিয়োগ নিয়ম বহির্ভূত।

বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে এবং ভাইস-চ্যান্সেলর কর্তৃক নির্দিষ্টকৃতভাবে অধ্যাপকের মধ্যে থেকে ডিন পদ আবর্তিত হবে এবং তিনি দুই বৎসরের মেয়াদে তাহার পদে বহাল থাকবেন।

তবে শর্ত থাকে যে, কোনো বিভাগে অধ্যাপক না থাকলে সেই বিভাগের জ্যেষ্ঠতা সহযোগী অধ্যাপক ডিন পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হবে এবং কোনো বিভাগের একজন অধ্যাপক ডিনের দায়িত্ব পালন করে থাকলে ঐ বিভাগের পরবর্তী পালাসমূহে বাকি অধ্যাপকগণ জ্যেষ্ঠার ভিত্তিতে ডিন পদে নিযুক্তির সুযোগ পাবেন।

আরও শর্ত রয়েছে, একাধিক বিভাগে সমজ্যেষ্ঠ অধ্যাপক অথবা সহযোগী অধ্যাপক থাকলে, সে ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে ডিন পদের আবর্তনক্রম ভাইস-চ্যান্সেলর কর্তৃক নির্দিষ্ট হবে।' নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ এর ২৩ নং ধারার, ৫ নং উপধারায় অনুষদের ডিন নিয়োগ সংক্রান্ত এসব বিধির উল্লেখ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের উপযুক্ত শিক্ষক থাকার পরেও বিজ্ঞান অনুষদ থেকে ডিন নিয়োগ সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল বলে মনে করেন ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক ড. আবদুল কাইয়ুম মাসুদ। তিনি বলেন, অনুষদের ডিন একটি একাডেমিক পদ। এই পদে একজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন আছে এবং তার বিধান আছে। এটি এমন কোনো পদ নয় যেখানে প্রশাসন ইচ্ছামত নিয়োগ দিতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের আইনের ব্যত্যয় কখনো কাম্য হতে পারে না।

এই বিষয়ে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ডিন হওয়ার মতো যোগ্য লোক থাকা সত্ত্বেও বিজ্ঞান অনুষদ থেকে ডিন নিয়োগ কতটা যুক্তিসংগত?

তিনি বলেন, আমরা চাই, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রণীত বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী যিনি ব্যবসা প্রশাসনে অনুষদের ডিন হওয়ার যোগ্য তাকেই নিয়োগ দেয়া হোক।

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, এর আগেও এই অনুষদে ডিন হিসেবে অন্য বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ দেয়ায় নানান সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে বিভাগগুলো। তাছাড়া এর আগের ডিন গত দুই বছরে একটিও অফিসিয়াল মিটিং ডাকেননি।

ডিন নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে যে তিনজন সহযোগী অধ্যাপক রয়েছেন তাদের জ্যৈষ্ঠতা নিয়ে একটা সমস্যা রয়েছে। যোগদানের দিক দিয়ে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জ্যৈষ্ঠ শিক্ষক হলেও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে দীর্ঘ সময় ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থানের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সেই বিষয়টা সমাধান হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অনুষদ পরিচালনা করার জন্য এই ডিন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম বলেন, এটা আমার কোনো একক সিদ্ধান্ত নয়। বিষয়টি আলাপ আলোচনা করেই ডিন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কাকে দিয়ে কি চালানো যাবে এটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভালো বুঝে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা ডিন নিয়োগ দিয়েছি।

উল্লেখ্য, বর্তমানে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে নিয়োগ পাওয়া অধ্যাপক ড. সেলিমকে এর আগে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন নিয়োগ দেয়া নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিলো। তখন একই বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অভিযোগ দিয়েও সুরাহা না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।