২৫ মে ২০২১, ২১:৫৬

বশেমুরবিপ্রবি: অনলাইন ক্লাসের বাইরে ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে প্রায় ১৪ মাস যাবৎ বন্ধ রয়েছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)। এই সময়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে গত জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি শুরু করেছে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম। কিন্তু প্রায় এক বছর পার হয়ে গেলেও এখনও বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থীই রয়েছে অনলাইন ক্লাসের বাইরে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪টি বিভাগের মধ্যে ৩৩টি বিভাগ অনলাইন ক্লাস চলছে। আর্কিটেকচার বিভাগ ব্যতিত প্রায় প্রতিটি বিভাগেই অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ। অনেক সময় এ উপস্থিতি নেমে আসে ৩০ শতাংশে।

শিক্ষার্থীরা জানান, প্রয়োজনীয় ডিভাইস না থাকা, দুর্বল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা, আর্থিক সমস্যা এবং সুনির্দিষ্ট ক্লাস রুটিন না থাকায় শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছে না।

আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী উজ্জ্বল মন্ডল কৃষ্ণময় বলেন, ‘প্রথম বর্ষ থেকেই আমি ক্লাসের নিয়মিত শিক্ষার্থী ছিলাম। কিন্তু বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। নেটওয়ার্ক সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে আমার পক্ষে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয় না। এছাড়া দু-একটা ক্লাসে অংশগ্রহণ করলেও আইনের মতো জটিল বিষয় অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে সঠিকভাবে বুঝতে পারি না।’

মুশফিকুর রহিম নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘স্মার্টফোন না থাকায় আমি শুরুর দিকে ইচ্ছে থাকা সত্বেও অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। অন্যের ফোন দিয়ে ক্লাস করার চেষ্টা করলেও নির্দিষ্ট কোনো ক্লাস রুটিন না থাকায় সেটিও সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে স্মার্টফোন কেনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সফট লোনের জন্য আবেদন করি। কিন্তু আমাদের বিভাগের কয়েকজন টাকা পেলেও আমি পাইনি। শেষ পর্যন্ত বাড়িতে চাপ দিয়ে স্থানীয়ভাবে লোন নিয়ে ফেব্রুয়ারিতে মোবাইল কিনলাম, কয়েকদিন নিয়মিত ক্লাসও করলাম। কিন্তু শেষের দিকে ক্লাসে অংশগ্রহণ করায় খাপ খাওয়াতে পারলাম না। তাই এখন আর ক্লাস করি না।’

আর্থিক সমস্যার বিষয়টি উল্লেখ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মানবিক অনুষদের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার পরিবার নিম্ন মধ্যবিত্ত। বাবা অটোরিকশা চালিয়ে কোনোমতে সংসার চালান। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকা অবস্থায় টিউশন করিয়ে নিজের খরচ বহন করার পাশাপাশি পরিবারকেও কিছু সহায়তা করতাম। কিন্তু করোনার কারণে এক বছর আগে টিউশন হারিয়েছি। আর লকডাউনের কারণে বাবার আয়ও অনেকদিন বন্ধ ছিলো। তাই বাধ্য হয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক হিসেবে কাজ করছি। এ কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছি না।’

শিক্ষার্থীদের এ সকল সমস্যার কথা জানিয়েছেন শিক্ষকরাও। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান নাঈম ফেরদৌস বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ গ্রামে বসবাস করে, অনেকের আর্থিক সমস্যাও রয়েছে। আর এর ফলে ক্লাসগুলোতে প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীই অনুপস্থিত থাকে।’

ব্যাচ ও বিভাগ অনুযায়ী সশরীরে পরীক্ষা নিতে পারে বশেমুরবিপ্রবি

বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধু ইনস্টিটিউট অব লিবারেশন ওয়ার অ্যান্ড বাংলাদেশ স্টাডিজের শিক্ষক ড. মো. আবু সালেহ বলেন, ‘দূর্বল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা, আর্থিক সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে আমাদের প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ শিক্ষার্থীই অনলাইন ক্লাসের বাইরে রয়েছে। আর এত অধিক শিক্ষার্থী বাইরে থাকায় অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে গিয়েছে।’

প্রশাসনের দায়বদ্ধতার বিষয়টি উল্লেখ করে এই শিক্ষক আরও বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি কমদামে ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করা হতো এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বিভিন্ন খাতের অব্যবহৃত অর্থগুলো ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের সহায়তার ব্যবস্থা করা হতো, তাহলে হয়তো অনেক শিক্ষার্থীর সমস্যার সমাধান হতো। অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতি বৃদ্ধি পেতো।’

এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব বলেন, ‘মফস্বলে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। সকল দিক বিবেচনা করে সরকার বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কিন্তু ভারতীয় ভ্যারিয়ন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশংকায় সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে একজন উপাচার্য হিসেবে আমার প্রত্যাশা সরকার দ্রুত শিক্ষার্থীদের করোনা ভ্যাকসিন নিশ্চিত করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’