করোনা সংকটে অনিশ্চয়তায় শাবিপ্রবির ৪র্থ সমাবর্তন

  © সংগৃহীত

করোনা মহামারীর সংকটময় অবস্থার ব্যাপক বিস্তৃতির ফলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি)  চতুর্থ সমাবর্তনকে ঘিরে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। গতবছরের ডিসেম্বরে চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে তখন তা করা সম্ভব হয় নি। পরবর্তীতে মহামান্য রাষ্ট্রপতির পরামর্শক্রমে এ বছরের এপ্রিল-জুন এর মাঝামাঝি সময়ে সমাবর্তন আয়োজনের কথা ভাবছিলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে প্রাণঘাতী করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কবলে পড়ে এ বছরেও সমাবর্তন হবে কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। চতুর্থ সমাবর্তনের বিভিন্ন সংকট-সম্ভাবনা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস প্রতিনিধির কাছে তুলে ধরেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির অফিস থেকে আমাদেরকে এপ্রিল থেকে জুন মাসের মাঝে একটি সময় নির্ধারণ  করতে বলা হয়েছিল। তাই আমরা এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে (কনভোকেশনের) সময় দিয়েছিলাম।

মাঝে করোনার সংক্রমণ হ্রাস পাচ্ছিলো দেখে ধারণা করেছিলাম আমরা এপ্রিল থেকে জুনের মাঝে সমাবর্তন দিতে পারবো। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতিতে তা আর করা যাচ্ছে না। গত বছর আমরা ২০১১ সাল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কনভোকেশন দিয়েছি। আমরা চেয়েছিলাম ২০১৯-২০ সাল পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীদেরকে কনভোকেশন দিয়ে দিতে।  এখন যেহেতু তা হয় নাই তাই ওয়েট করতে হবে। যখন সুযোগ হয় তখন করতে হবে ।

অনলাইনে সমাবর্তন আয়োজনের ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা হয়তো অনলাইনে একটা চেষ্টা করতে পারতাম।  এ মাসের প্রথম দিকে যেটা নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি করেছে। তারা শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট দিতে পারে না যদি না কনভোকেশন হয়। কনভোকেশন ছাড়া ওদের শিক্ষার্থীরা কোন সার্টিফিকেট পাবে না। এটা তো আমাদের জন্য মেন্ডেটরি ব্যাপার না, সেজন্যে এখন আমরা চাইলেও পারবো না। কারণ এটা করতে গেলে আমাদের এখানে কাজ করতে হবে। লোকজনের মোভমেন্ট করতে হবে, বিভিন্ন কমিটি হবে। কাজেই এখন আমরা এটা চিন্তার মধ্যে রাখি নাই। করোনা চলে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাকিটা (২০১১ এর পর থেকে) একেবারে আপ টু ডেট করে ফেলবে। তখন আর ব্যাকলগ থাকবে না। আমরা এটা করার জন্য খুবই আগ্রহী। আমরা প্রার্থনা করি যেন করোনা চলে যায়। তখন আমরা দ্রুত চূড়ান্ত কনভোকেশনটা করে সবাইকে সার্টিফিকেট দিতে পারব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালনের ক্রান্তিলগ্নে এসে অনিশ্চিত সমাবর্তন নিয়ে তিনি বলেন, আমার টার্ম তো প্রায় শেষ। এরপর যে আসবে সে যদি করে, আরেকটা কনভোকেশন করলে পেন্ডিং শেষ হয়ে যাবে। দ্বিতীয় কনভোকেশন হয়েছিল ২০০৭ সালে, এরপর আমরা করলাম ২০২০ সালে ।  কত বছর পরে! আমরা করেছি ২০‌‌১১ সাল পর্যন্ত। এর পর ৫-৬ বছর বাকি আছে।  এখন ২০২১ সাল চললেও সেকেন্ড ইয়ার,থার্ড ইয়ার ছাড়া প্রায় ৩-৪ বছর গ্যাপ আছে এখানে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি আরেকটা কনভোকেশন দেয় সেটা প্রথমবার একটু বড় হবে।  তারপরে প্রতি বছর করলে সেন্ট্রাল অডিতে (অডিটোরিয়ামে) করতে পারবে।  তখন এত বড় আয়োজন লাগবে না, কিছু লাগবে না।  তৃতীয় কনভোকেশনের পর এখন আমাদের ছাত্র সংখ্যা কমে গেছে। কাজেই এটা করা আমাদের পক্ষে ডিফিকাল্ট কিছু হবে না।  প্রতি বছর করতে পারবে। এভাবে কনভোকেশন চালু করলে কনভোকেশনের জন্য আর ছেলে মেয়েদের অপেক্ষা করতে হবে না।

কনভোকেশন নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন উপাচার্য। তিনি বলেন, আমার প্ল্যান ছিল এটা যে একবছর এটা করে ফেললাম। এরপর সেন্ট্রাল অডিতে সুন্দরভাবে প্রতি বছর করলাম।  ছেলে মেয়েরাও খুবই উৎসাহ পেল। এটা একটা খুবই সুন্দর উৎসব মুখর পরিবেশ, তারা সবাই খুব এনজয় করে, তাদের অভিভাবকেরা এনজয় করে। তাদের জীবনে এটা একটা গর্ব, এটা একটা মূল্যবান স্মৃতি ।  এটা প্রতি বছর হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। মহামারী চলে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটা নিয়ে অবশ্যই চিন্তা করবে।

করোনা নিয়ন্ত্রণে আসলে এ বছর কনভোকেশন দেয়ার সম্ভাবনা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এটা তো কন্ডিশনাল ব্যাপার, এভাবে বলাটা আসলে মুশকিল। এখনকার যে অবস্থা আমরা কখন গিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবো তা বলা যায় না।  তবে আমরা এটা বলতে পারি যে আমরা অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিব। যখন সুযোগ আসে তখন যত দ্রুত সম্ভব আমরা এটা করবো। সবকিছু যদি পারমিট করে, সিচুয়েশন যদি আমাদের পক্ষে যায় তাহলে আমরা সময় ক্ষেপন করব না।  আমাদের এখন একটা কনভোকেশন পেন্ডিং আছে।  আর কোন পেন্ডিং নাই।


সর্বশেষ সংবাদ