শিক্ষকদের আন্দোলনে বন্ধ অনলাইন ক্লাস, হতাশ বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা
“আমাদের ২০২০ সালেই অনার্স শেষ করার কথা। কিন্তু করোনার কারণে অনেক পিছিয়ে গিয়েছি। এতদিন অনলাইনে ক্লাস চললেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির আন্দোলন কর্মসূচির কারণে আমাদের শিক্ষকগণ অনলাইন ক্লাস নেয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন তৈরি হয়েছে যে, আমাদের অনেক সহপাঠী পড়াশোনা পুরোপুরি বাদ দিয়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য অন্য কোনো কাজ বেছে নিবে কিনা তা চিন্তা ভাবনা করা শুরু করেছে।”- হতাশা প্রকাশ করে কথাগুলো বলছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী শীষ মোহাম্মাদ তানিম।
তানিম জানান, তাদের বিভাগের শিক্ষকবৃন্দের আন্তরিক চেষ্টা ও শিক্ষার্থীদের তীব্র আগ্রহে তারা ২য় সেমিস্টারের অনলাইন ক্লাস শুরু করেছিলেন। ১ সপ্তাহ তীব্র গতিতে ক্লাসও চললেও আন্দোলনের কারণে ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়। করোনার কারণে পিছিয়ে থাকার পর এমন পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের অনেক বেশি হতাশাগ্রস্ত করে তুলেছে। শিক্ষার্থীরা এখন যেকোনো মূল্যে ক্লাসে ফিরে সিলেবাস শেষ করতে চান এবং বিশ্ববিদ্যালয় খুললেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চান।
শুধুমাত্র তানিম-ই নন, পদোন্নতি সংক্রান্ত দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শিক্ষকদের অনলাইন ক্লাস বর্জনের জেরে বশেমুরবিপ্রবির অধিকাংশ শিক্ষার্থী বর্তমানে হতাশা এবং শঙ্কা নিয়ে সময় পার করছেন।
কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থী মুকুল আহমেদ রনি বলেন, “প্রায় এক বছর যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আমরা নিশ্চিতভাবেই একটা দীর্ঘ সেশনজটে পড়তে যাচ্ছি। এমন পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাস কিছুটা হলেও ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি করেছিলো। কিন্তু প্রায় এক সপ্তাহ যাবৎ শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে অনলাইন ক্লাসও বন্ধ থাকায় আমরা বেশ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছি। ক্যারিয়ার নিয়ে বর্তমানে অনেক বেশি শঙ্কা কাজ করছে।”
অনেকটা একই বিষয় উল্লেখ করে ক্লাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান মাহমুদ বলেন, 'গত ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনাকালীন মহামারীর জন্য পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষই কোনো না কোনো ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ প্রতিমাসেই কিন্তু তাদের বেতন ভাতা ঠিকই পেয়ে গেছেন। সরকার কোনভাবেই তাদের ১ মাসের বেতনও বন্ধ রাখেনি। এমন পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র আপগ্রেডেশনের জন্য অনলাইন ক্লাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত খুব ঘৃণ্য এক সিদ্ধান্ত বলে আমি মনে করি। ক্লাস না হলে পরীক্ষা হবে না, আমরা বছরের পর বছর সেশনজটে পরে যাব। জীবন থেকে সময় গুলা হারিয়ে যাবে। কিন্তু শিক্ষকগণ এক সময় ঠিকই ডিউ পেমেন্ট এ আপগ্রেডেশন পেয়ে যাবেন। এতে তাদের কোন ক্ষতি হবে না। তাই আমি মনে করি, নীতি-নৈতিকতার জায়গা থেকে, পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে তাদের এই সামান্য ক্ষতি মেনে নিয়ে আমাদের ক্লাস নেয়া উচিত।”
শিক্ষকদের প্রতি শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী চৌধুরী সালমান রহমান বলেন, “শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ করবো তারা যেনো দ্রুত আমাদের ক্লাস গুলো নেয়ার ব্যবস্থা করে। না হয় আমরা আরো বেশি পিছিয়ে যাচ্ছি। আমরা অন্যায় না করেও শাস্তি ভোগ করার মতো ভুগছি। আশা করবো আমাদের কথা তারা চিন্তা করবে।”
তবে শিক্ষার্থীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়লেও প্রকৃতপক্ষে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না বলে দাবি করেছেন বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো: কামরুজ্জামান। ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, “আমরা এর আগে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেও সমাধান না পেয়ে এধরণের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। তবে এই সিদ্ধান্তের জন্য শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। আন্দোলন শেষে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে বর্তমান ক্ষতি সমন্বয় করা হবে।” এভাবে দীর্ঘদিন ক্লাস বন্ধ রেখে পরবর্তীতে অতিরিক্ত ক্লাস নেয়া হলে শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি চাপ হয়ে যাবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।”
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ.কিউ.এম মাহবুব দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, “আপগ্রেডেশনের জন্য রিজেন্ট বোর্ডের মিটিং প্রয়োজন। রিজেন্ট বোর্ডের মিটিং ব্যতিত আমার একার পক্ষে তো কিছু করা সম্ভব নয়। আগামী ২৪ তারিখ রিজেন্ট বোর্ডের মিটিং হবে। আমি শিক্ষক সমিতিকে বলেছিলাম ক্লাসে ফিরে যেতে এবং ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। কিন্তু শিক্ষক সমিতি তাদের সিদ্ধান্তে অনড়।”
এসময় উপচার্য আরও বলেন, একজন আদর্শ শিক্ষকের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে শিক্ষা প্রদান করা, তাদের উন্নয়নে কাজ করা। কিন্তু যারা নিজেদের দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে তারা আদর্শ শিক্ষক কিনা এ বিষয়ে আমি সন্দিহান।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও৷ সেশনজট এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো এইসময়ে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার৷ কিন্তু প্রাপ্যতার তারিখ থেকে আপগ্রেডেশনর দাবিতে গত ৬ এপ্রিল থেকে সকল ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি।