ফেসবুক স্ট্যাটাসের প্রতিবাদ জানাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের ফেসবুক স্ট্যাটাসের প্রতিবাদ জানাতে একাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছেপেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য প্রফেসর এম রোস্তম আলী। বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলের টাকার এমন ব্যবহারকে অপচয় উল্লেখ করে উপাচার্যের এই সিদ্ধান্তকে নজিরবিহীন, অনৈতিক এবং ক্ষমতার অপব্যবহার বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত বছরের ৫ নভেম্বর উপাচার্য এম রোস্তম আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তথ্য প্রমাণসহ অভিযোগ পেশ করে প্রতিকার চান বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় তা আমলে নিয়ে ভিসি রোস্তম আলীর অনিয়ম ও দূর্নীতি তদন্তের নির্দেশ দেন। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি ) প্রফেসর ড. মো. আবু তাহেরকে আহবায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের পত্র দেয়।
তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আব্দুল আলীম অভিযোগগুলো আবারও উল্লেখ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে তা মিথ্যা উল্লেখ করে পাবিপ্রবি ভিসি প্রফেসর এম. রোস্তম আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের মাধ্যমে গত রবিবার কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার প্রথম ও শেষ পাতায় বিপুল অর্থ ব্যয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতিবাদ লিপি ছাপান।
ব্যক্তিগত অপরাধ আড়াল করতে কিংবা আত্মপক্ষ সমর্থনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল অর্থ ব্যয়কে অনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় বলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী শিক্ষক আব্দুল আলীম বলেন, ভিসি রোস্তম আলী যোগদানের পর থেকেই একের পর এক এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থিক-প্রশাসনিক ও একাডেমিক অনিয়ম-দুর্নীতি করে চলেছেন। চাকরি দেওয়ার বিনিময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ভিসি আবদুস সোবহানকে রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য বানানো, শিক্ষকদের অনুপস্থিতিতে চেম্বার তছনছ, উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যক্তিগত ফাইল ঘেঁটে হয়রানি, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন করে বিভিন্ন পদে পছন্দের শিক্ষকদের বসিয়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা নষ্ট করা, শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি, ক্ষমতার অপব্যবহার করে কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে শিক্ষকদের শাস্তি প্রদান, প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে পদোন্নতি আটকে রাখা, রাজাকার পরিবারের সন্তান বলে অপবাদ দেওয়া, শহীদ মিনার নির্মাণসহ পাঁচশ কোটি টাকার উন্নয়নকাজে অনিয়ম, ১০ কোটি টাকার বইক্রয়ে কারসাজি করে টেন্ডার প্রদান, পরিবহন খাতে অনিয়ম, পদোন্নতি নিয়োগে অনিয়মসহ পঞ্চাশের অধিক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করবে ইউজিসি।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে আমরা সাক্ষাৎ করে ভিসির সুনির্দিষ্ট অনিয়মের তথ্য ও কাগজপত্র দেখালে তিনি ইউজিসির মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। ইউজিসি আমাদের কাছে লিখিত বক্তব্য ও কাগজপত্র চেয়েছে। তদন্ত কমিটির কাছে আমার সেগুলো হস্তান্তর করবো। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর আন্তরিকতা ও ত্বরিৎ পদক্ষেপের বিষয়টি জানিয়ে আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেই। অথচ, ভিসি আবারও অনিয়ম করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থে আমার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ লিপি ছেপেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম বাবু বলেন, কারণে-অকারণে সেমিস্টার ফি বৃদ্ধি, ডাইনিং ক্যান্টিনে খাবারের দাম বাড়ানোর সময় ভিসি স্যার বরাদ্দ না থাকার অজুহাত দেন। অথচ, নিজের দুর্নীতি অপকর্ম ঢাকতে অর্থ ব্যয়ে টাকার কোনও অভাব হয় না। আমরা বিষয়টির তদন্ত চাই।
পাবনা নাগরিক মঞ্চের সদস্য সচিব জাকির হোসেন বলেন, পাবিপ্রবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে প্রায়ই নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তিনি সেসব অনিয়মের ব্যাখ্যা না দিয়ে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মরিয়া হন, রাষ্ট্রীয় অর্থও ব্যয় করেন। প্রতিবাদ দিতে অর্থ ব্যয় তার অনিয়ম ঢাকতে নতুন অনিয়মের আরেকটি দৃষ্টান্ত।
বিষয়টি নিয়ে পাবিপ্রবি ভিসি রোস্তম আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।