উচ্চশিক্ষা: চলতি মাসে বিইউপি দিয়ে শুরু হচ্ছে ভর্তিযুদ্ধ
এইচএসসি পরীক্ষার ফল বের হতে না হতেই শুরু হয়েছে উচ্চশিক্ষার ভর্তি যুদ্ধ। চলতি বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা তিন গুণেরও বেশি হওয়াতে এরইমধ্যে ভর্তিচ্ছু আর অভিবাবকদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে পড়তে না পারলেও এবার উচ্চশিক্ষায় কোন আসন সংকট হবে না বলে জানিয়েছে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।
এদিকে ফল ঘোষণার দু’দিনের মধ্যে প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালসে (বিইউপি) ভর্তি পরীক্ষার দিনক্ষণ ঘোষণা করেছে। তাদের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
তাছাড়া মার্চের ১৯-২০ তারিখে ঢাকার অদূরে গাজীপুরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি)’র ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। দেশের দেড়শটিরও বেশি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও আরও তিনটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আলাদা কোটা রয়েছে।
এদিকে, দেশে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব না কমায় অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী এপ্রিলের আগে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে, এপ্রিলেই সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর।
বর্তমানে দেশে ৪৬টি স্বায়ত্তশাসিত ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় ও ৪টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি ৩৯টিতে সরাসরি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে থাকে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে আলাদাভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে প্রথম বর্ষে ভর্তি নিয়ে থাকে কর্তৃপক্ষ। আর সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (জিএসটি) গুচ্ছে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়: প্রথমবারের মতো এবার ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও নীতিনির্ধারকরা এক বৈঠকে বসবেন। এতে ভর্তি পরীক্ষার দিনক্ষণ নির্ধারণেও আলোচনা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং জিএসটি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, দেশের করোনার প্রাদুর্ভাব না কমানো পর্যন্ত এই পরীক্ষা আয়োজন করা যাবে না। সেক্ষেত্রে কোন নির্দ্দিষ্ট দিনক্ষণ আপাতত বলা যাচ্ছে না। তবে বিয়য়টি নিয়ে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (কুষ্টিয়া), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সিলেট), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুলনা), হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (দিনাজপুর), মাওলনা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (টাঙ্গাইল), নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোয়াখালী), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুমিল্লা), জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় (ময়মনসিংহ), যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যশোর), বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (রংপুর), পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবনা), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (গোপালগঞ্জ), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (বরিশাল), রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রাঙ্গামাটি), রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ (সিরাজগঞ্জ), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি (গাজীপুর), শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় (নেত্রকোনা), বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (জামালপুর), পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পটুয়াখালী) এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
বুয়েট ছাড়াই প্রকৌশল ও প্রযুক্তি গুচ্ছে তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়: গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় দেশের তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যাচ্ছে না বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। তারা আগের মতো আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরুরি একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর ফলে বুয়েটকে ছাড়াই রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) এবার প্রকৌশল ও প্রযুক্তি গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা বুয়েট আসবে না। একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানতে পেরেছি। তবে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে তিন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
কৃষি গুচ্ছে ৬ বিশ্ববিদ্যালয়: গত বছর ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বারের মতো ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে-বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু), সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
এদিকে, চারটি স্বায়ত্তশাসিত ও বাকি ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগের মতো আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হল-ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
তাছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস (বিইউপি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়।
তাছাড়া পলিটেকনিক থেকে পাস করা ডিপ্লোমাধারী ছাত্র-ছাত্রীরা শুধুমাত্র ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি শুরু হতে পারে আগামী এপ্রিলে। প্রায় সাড়ে ১০ হাজার আসনের বিপরীতে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, এপ্রিলে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে পরীক্ষা হবে। অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২ এপ্রিল এমবিবিএসের পরীক্ষা এবং ৩০ এপ্রিল ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বর্তমানে দেশের ১৮টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসনসংখ্যা ২ হাজার ৯৩০। এবার ২৮২ আসন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এ সিদ্ধান্তের পর ওই আসন বেড়ে হলো ৩ হাজার ২১২। তাছাড়া ৯টি সরকারি ডেন্টাল কলেজ/ইউনিটে আসনসংখ্যা ৫৪৫টি।
১৮টি মেডিকেল কলেজে যত আসন সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (১০), স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (১০), ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (১০), চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (১০), রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (১০), এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ (১০), শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (১০), রংপুর মেডিকেল কলেজ (১০), শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ (২৫), কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (২০), খুলনা মেডিকেল কলেজ (২০), শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (২০), ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ (২০), এম আব্দুর রুহম মেডিকেল কলেজ (২০), মুগদা মেডিকেল কলেজ (১০), শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ (৭), কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ (১০) এবং বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ (৫০)।