হঠাৎ অশান্ত যবিপ্রবি, নেপথ্যে শিক্ষকদের অর্ন্তকোন্দল
- যবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২১, ০১:২০ PM , আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২১, ০২:২৫ PM
শিক্ষকদের অর্ন্তকোন্দলে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) হঠাৎ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যবিপ্রবি তুলনামূলকভাবে একটি নবীন বিশ্ববিদ্যালয় হয়েও শিক্ষা ও গবেষণায় বাংলাদেশে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছিল। সম্প্রতি বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ভিসিপন্থী ও ভিসিবিরোধী গ্রুপিং তৈরী হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে তৈরী হওয়া শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে গ্রুপিং তৈরী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে।
শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবীর জাহিদ শিক্ষকদের অর্ন্তকোন্দলে বুধবার (২৮ জানুয়ারি) সংগঠিত হওয়া ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনিয়ম বন্ধ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যা নিয়োগ বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজদের ভালো লাগেনি। আজ ২৭ জানুয়ারি, বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা যারা করছে, তারা আবারও ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কনিষ্ঠ ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে অকথ্য, নোংরা ও অশালীন ভাষায় আক্রমন করেছে এবং মারতে উদ্যত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সাধারণ সভা চলাকালে, ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন বিভাগের চেয়ারম্যান মো. ফিরোজ কবির আলোচনার এক পর্যায়ে একটি প্রিন্টেড একটি কাগজ দেখিয়ে অভিযোগ করেন যে, তাঁকে শিক্ষক সমিতির সম্মিলিত ফেসবুক গ্রুপ থেকে ব্লক করা হয়েছে, যাঁর এডমিন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন। ফিরোজ কবিরসহ বেশিরভাগ শিক্ষকই অভিযোগ করেন যে, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সব সময় ভুল তথ্য ছড়িয়ে অপরাজনীতি করেছেন। ফিরোজ কবির অভিযোগ করেন যে, আমি শুধু সাধারণ সম্পাদকের ভুল তথ্যের উত্তর দিয়েছিলাম, আর তাতেই আমার কণ্ঠ রোধ করতে আমাকে ব্লক করেছে, আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই। তখন শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. মোঃ জাফিরুল ইসলামসহ অন্যান্য শিক্ষকগণও এই অন্যায়ের বিচার চান। তখন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ তার সাথে আরও কয়েকজন শিক্ষক জোটবদ্ধ হয়ে বিচার প্রার্থী শিক্ষকদের দিকে তেড়ে গিয়ে গালি দিয়ে বলতে থাকেন যে, ফেসবুক গ্রুপ থেকে বহিষ্কার করেছি তো কি হয়েছে? এখন আপনাদের শিক্ষক সমিতিতেই অবাঞ্ছিত করলাম, দেখি কি করতে পারেন! এ সময় ব্যাপক হট্টগোলের সৃষ্টি হয় এবং সমিতির সভাপতি ড. তোফায়েল আহমেদ দ্রুত সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন। বিশ^বিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার, পাঁয়তারাকারী, স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব পোষণকারীদের বিচারের ভার শিক্ষক সমাজসহ সবার কাছে দিলাম।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আমজাদ হোসেন জানান, শিক্ষক সমিতির মিটিংয়ে উপস্থিত না থেকে মিটিং এর সিদ্ধান্ত নিয়ে কথা বলার কারনে, চিঠিতে বাংলা ভাষাগত ব্যবহার নিয়ে কথা বলার কারণে এবং শিক্ষক সমিতির ফেসবুক গ্রুপে উল্টাপাল্টা লেখার কারণেই শিক্ষক ফিরোজ কবিরকে তিন দিনের জন্য শিক্ষক সমিতির ফেসবুক গ্রুপ তাকে সতর্কবার্তা স্বরূপ মিউট করে দেওয়া হয়েছে। ২৯ জানুয়ারি পরে তা আবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঠিক হয়ে যাবে। শিক্ষক ফিৱোজ কবিরকে চাকরির বিধিমালা/ নীতিমালা বহির্ভূতভাবে শারীরিক শিক্ষা এবং ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ফিজিওথেরাপি এবং রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে যা যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর অন্য কোন শিক্ষককে করা হয়নি। এছাড়া ফিরোজ কবিরের স্ত্রীকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য চাকরির নীতিমালা বা বিধিমালা পরিবর্তন করা হয়েছে এবং কিছু শর্ত শিথিল করা হয়েছে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরে বা ভিসি মহোদয়ের নিকট খোঁজ নিলে যথাযথ প্রমাণ পাওয়া যাবে। আর এসব বিষয় নিয়ে কথা বললে ফিরোজ কবির মিটিংয়ে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে তবে সেখানে কোনোপ্রকার ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতি বা লাঞ্ছিতের ঘটনা ঘটেনি।
ফিরোজ কবির উপাচার্য মহোদয়ের ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদের মদদপুষ্ট হয়ে শিক্ষক সমিতির মিটিংয়ে উত্তেজনা তৈরি করে। শিক্ষক সমিতির গত ১৮ ও ২৩ তারিখের চিঠি ভিসি মহোদয়ের অফিস কর্তৃক গ্রহণ করা হয়েছে অথচ এই চিঠি গ্রহণ করাকে কেন্দ্র করে ফিরোজ কবির বিভিন্ন মহলে বিভিন্ন উল্টা-পাল্টা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বক্তব্য পেশ করেছন এবং সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখছেন। তিনি উপাচার্যের আশির্বাপুষ্ট হয়ে ৩০ বছরের অধিক বয়সে পিএইচডি ডিগ্রী ছাড়া প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন এবং তার স্ত্রীকেও চাকরি দিয়েছেন।
বিশ্বদ্যিালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. মো. তানভীর ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, করোনার শুরু থেকে যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিরতিহীনভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বন্ধ ক্যাম্পাসে জিনোম সেন্টারের মাধ্যমে করোনা পরীক্ষা করছে। এছাড়া শিক্ষা ও গবেষণায় দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় উঠে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, এসব অর্জন এবং সাফল্যের মধ্যে শিক্ষকদের নিয়ে ক্যাম্পাসে যে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা আসলে দুঃখজনক। শিক্ষকদের একটি অংশ যে দাবিগুলো নিয়ে এসেছেন তাদের এখানে পদ্ধতিগত ভুল থাকতে পারে। বিষয়গুলো প্রশাসন অবগত আছে এবং বিচার-বিশ্লেষণ করছে। শিগগিরই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে।