সেশনজটের আশঙ্কায় বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা, আরও সময় নেবে কর্তৃপক্ষ
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে এরমধ্যেও সেশনজট এড়াতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স চতুর্থ বর্ষ এবং মাস্টার্সের ফাইনাল পরীক্ষার তারিখও ঘোষণা করেছে।
কিন্তু অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করলেও পরীক্ষার বিষয়ে এখনও নিরব গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) প্রশাসন। আর এর ফলে সেশনজটসহ চাকরি ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ হাবিব বলেন, ‘আমাদের সকলেরই প্রত্যাশা থাকে কর্মক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ফাইনাল পরীক্ষা না হওয়ায় আমরা ৪৩তম বিসিএসে আবেদন করতে পারিনি৷ অথচ আমাদের সেশনে যারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলো, তারা আবেদন করতে পেরেছে। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশকিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও অনার্স ফাইনাল এবং মাস্টার্সের পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ও এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করুক। অন্যথায় আমাদের সেশনজটের মুখোমুখি হতে হবে এবং চাকরির ক্ষেত্রেও আমরা পিছিয়ে পড়বো।’
একই বিষয় উল্লেখ করে অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মোঃ আব্দুল কাদের শাকিল বলেন, ‘আমাদের সকলেরই শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য থাকে স্বাবলম্বী হওয়া। বর্তমানে চাকরিপ্রত্যাশীদের তুলনায় আমাদের চাকরির সুযোগ কম। তাই আমাদের জন্য প্রতিটি চাকরির সার্কুলারই গুরুত্বপূর্ণ। করোনার প্রাদুর্ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সরকারি চাকরির সার্কুলার বন্ধ থাকছে না, যার অন্যতম উদাহরণ ৪৩তম বিসিএসের সার্কুলার।’
এই ছাত্র আরো বলেন, ‘ইতোমধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি বিবেচনা করে অনার্স ফাইনাল ইয়ার এবং মাস্টার্সের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনও এ বিষয়ে নিরব। তারা যদি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় দ্রুত পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ না নেয়, তাহলে আমরা চাকরির ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ হারাবো। তাই আমরা চাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও দ্রুত পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ নিক।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট দ্রুত পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফলের দাবি জানিয়ে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোবাশ্বের শিকদার বলেন, ‘আমরা যারা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, তাদের একটা পারিবারিক চাপ সবসময় থাকে। এ অবস্থায় সেশনজটে পড়লে জব মার্কেটে আমরা ব্যাপকভাবে পিছিয়ে পড়বো। ইতোমধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬-১৭ ব্যাচের বন্ধুরা আমাদের আগেই চুড়ান্ত পরীক্ষা শেষ করে জব মার্কেটে প্রবেশ করছে। তাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বিশেষভাবে আবেদন করবো, আমাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আগামী মার্চের মধ্যে চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা শেষ করে দ্রুত রেজাল্ট প্রকাশ করার।’
এদিকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাহুল মজুমদার বলেন, ‘বর্তমান করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। তাই সেশনজটের কথা মথাই রেখে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করবো, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ফাইনাল পরিক্ষার ব্যবস্থা করে দ্রুত পরীক্ষা গ্রহণের জন্য, যেন আমরা বিসিএসসহ সকল চাকরির আবেদন করতে পারি।’
এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য প্রফেসর ড. এ. কিউ. এম মাহবুবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে। এসকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা গ্রহণের বিরোধিতা করছে। তাই আমরা পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার ক্ষেত্রে সময় নিচ্ছি। কারণ ইউজিসি পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি দিলেও হল খুলে দেয়ার জন্য সরকারি সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।’ এসময় তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’