০৬ ডিসেম্বর ২০২০, ১২:১৩

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের বিচার চায় বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

ভাস্কর্য বিরোধিতার নামে ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন, অবমাননাকর বক্তব্য এবং নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাংচুরের প্রতিবাদ জানিয়েছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষক সমিতি। এর সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন শিক্ষকরা। আজ রোববার (৬ ডিসেম্বর) সকালে শিক্ষক সমিতির এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে সম্প্রতি কিছু ধর্মান্ধ উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ ও অবমাননা করে বক্তব্য দিয়েছে, যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। এরই মধ্যে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্য ভাংচুরের মত ন্যাক্কারজনক ঘটনার ধৃষ্টতাও দেখিয়েছে।’

এতে বলা হয়, বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি মনে করে, এমন ধৃষ্টতা স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রের মূলনীতির উপর হুমকি স্বরূপ এবং ইহা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে স্বাধীনতা বিরোধীদের প্ররোচনায় হীন রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করার সুদুরপ্রসারী অপকৌশল। এই মৌলবাদী গোষ্ঠী মূর্তি এবং ভাস্কর্যকে একাকার করে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ঐতিহ্যগতভাবে ধর্মপ্রাণ কিন্তু ধর্মান্ধ নয়, তারা ভিন্নমত ও পথের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

শিক্ষকরা বলেন, অতীতেও বিভিন্ন মৌলবাদী গোষ্ঠী ধর্মভিত্তিক অপরাজনীতির মাধ্যমে এদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হতে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও পারবে না। যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন, বাংলাদেশের বুক থেকে কোনদিনও জাতির পিতার নাম মুছে দিতে পারবে না। কারণ, বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। জাতির জনক অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনা থেকেই বাঙ্গালি জাতির মুক্তির জন্যে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় লাল-সবুজের স্বাধীন বাংলাদেশ। সেই স্বাধীন বাংলাদেশে মনগড়া ও স্বার্থ হাসিলের ধর্মীয় আস্ফালন মেনে নেয়া হবে না।

তারা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের সাথে মূর্তির তুলনা করে তারা বঙ্গবন্ধুর প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করেছে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার দুঃসাহস দেখিয়েছে এবং সুকৌশলে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরীর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এ ধরনের অপতৎপরতা জাতি অতীতেও মেনে নেয়নি এবং ভবিষ্যতেও মেনে নেবে না।

এমতাবস্তায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমাজ দেশপ্রেমী ধর্মপ্রাণ নাগরিকদের স্বাধীনতা বিরোধী সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে আহবান জানান। একই সাথে ধর্মান্ধ অপশক্তির এহেন অপচেষ্টার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদের চিহ্নত করে অতি দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।

উল্লেখ্য, ভাস্কর্য বিরোধী ধর্মীয় অপব্যাখ্যা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন ও অবমাননাকর বক্তব্য প্রদান এবং বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন কর্মসূচী ঘোষনা করেছে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি।