ধীর গতিতে চলছে কাজ: ৩ গুণ সময় পেরোলেও হয়নি ছাত্রীহল নির্মাণ
নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত তিন গুণ সময় চলে গেলেও এখনো শেষ হয়নি দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ৬ তলা বিশিষ্ট ছাত্রীহলের নির্মাণকাজ। প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ না করে ধীরভাবে চলছে কাজ। ফলে বিলম্বিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসন কার্যক্রম।
আবাসন কার্যক্রমে বিলম্ব হলে ভোগান্তিতে পড়তে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের। আবার বিলম্বে কাজ শেষ করলে বাড়তে পারে নির্মাণ ব্যয়। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়কে গুণতে হবে অতিরিক্ত অর্থ।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হলটি নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করলে কাজ পায় এম/এস.এমবি এলএস-জেভি নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পটি শেষ করতে তাদের ৫ মাস ২ দিন সময় বেধে দেয়া হয়। কিন্তু ১৫ মাস অতিবাহিত হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
নির্মাণাধীন ছাত্রীহলের নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম মেয়াদের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিলো ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় দ্বিতীয় মেয়াদ ২০২০ জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর’২৯ পর্যন্ত এবং সর্বশেষ ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তৃতীয়বারের মতো সময়বৃদ্ধির জন্য চিঠি পাঠিয়েছেন টিকাদান প্রতিষ্ঠানটি।
সরেজমিন দেখা যায়, ৬ তলা বিশিষ্ট ভবনের পেছনের দিকে ৫ তলা, পার্শ্ববর্তী একদিকে ৪ ও অন্যদিকে ৩ তলা এবং হলের সম্মুখে ১ তল পর্যন্ত ছাদ ঢালাই করতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি। যে পরিমাণ শ্রমিক দরকার তার বিপরীতে হাতেগোনা কয়েকজন শ্রমিক দিয়ে চলছে প্রকল্পটির কাজ।
শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রশাসনের সুষ্ঠু তদারকির অভাবে এবং অদক্ষ জনবল আর স্বল্প পরিমাণে শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর কারণে প্রকল্পের অগ্রগতি হচ্ছে না। বিভিন্ন মেয়াদে কয়েক ধাপ সময় বৃদ্ধি করেও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি দেখাতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। তিনবার সময়বৃদ্ধির পরও ছাত্রীহলের ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারবে কিনা সন্দেহ করছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২১ কোটি ৭১ লক্ষ ৬৯ হাজার ৮ শত পয়ষট্টি টাকা ব্যয়ে ৭২০ আসন বিশিষ্ট ৬ তলা ছাত্রী হলের নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ ছিলো ৫ মাস ২ দিন। নির্মাণাধীন ৭২০টি আসন, ক্যান্টিন-ডাইনিং ও রিডিংরুমের সু-ব্যবস্থা রয়েছে।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রোজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মোবারক হোসেন বিষয়গুলো স্বীকার করে বলেন, আমরা নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারিনি। কারণ ভবনের ভিত্তির কাজ শুরু করলে পাইলিং করার সময় মাটিতে অতিরিক্ত পানি চলে আসে। তখন আবার মাটি ভরবহন ক্ষমতা পরীক্ষা করতে হয়। কারণ ফাউন্ডেশনের ফুটিং বা পাইলিং মাটি পরীক্ষার রিপোর্টের উপর নির্ভর করে। এখানেই আমাদের ৬ মাসের মতো সময় চলে যায়।
তিনি বলেন, এছাড়াও করোনার কারণে কাজের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে আগামী বছরের জুনের মধ্যে আমরা এ প্রকল্প প্রশাসনকে বুঝিয়ে দিতে পারব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, পাইলিং, অতিবৃষ্টি ও করোনার জন্য বিভিন্ন সময় কাজ বন্ধ থাকায় ৩য় মেয়াদে সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নোটিশসহ আমরা নিয়মিত তদারকি করে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডাঃ মো. ফজলুল হক জানান, বিভিন্ন বৈশ্বিক সমস্যার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি নির্দিষ্ট মেয়াদে নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি। তবে সর্বোপরি এখন আমাদের লক্ষ্য হলো যে কোনো উপায়ে কাজ বুঝে নেয়া।