০৮ নভেম্বর ২০২০, ১১:৪৬

১৬ বছরে হাবিপ্রবির সিএসই অনুষদে অধ্যাপক মাত্র একজন!

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই অধ্যাপক সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন শিক্ষক ও শিক্ষাবিদ হিসেবে বিবেচিত হন। তারা মূলত গবেষণা পরিচালনা করেন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর বা প্রফেশনাল কোর্স সমূহে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। তারা ছাত্রদের মেন্টর এবং সুপারভাইজার হিসেবে স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্রদের থিসিসের (তত্ত্বীয়) গবেষণা পরিচালনা করেন।

অথচ দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ চালুর ১৬ বছর অতিবাহিত হলেও চলতি দায়িত্বে থাকা ডিন ছাড়া কোন অধ্যাপক নেই। অনুষদটির অধীনে বর্তমানে তিনটি বিভাগ চালু রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট এবং ডিজিটাল ডায়েরি থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, অনুষদে মোট শিক্ষক রয়েছেন ৩২ জন। এর মধ্যে অধ্যাপক একজন, সহযোগী অধ্যাপক ৯ জন, সহকারী অধ্যাপক ১৬ জন এবং প্রভাষক চারজন। তন্মধ্যে ইসিই বিভাগে কোন প্রভাষক নেই। একদিকে যেমন দু‘টি বিভাগে অধ্যাপক নেই অন্যদিকে আবার একটি বিভাগে কোন প্রভাষক নেই। শিক্ষক সংকট এবং পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা না থাকলেও প্রতিবছর ভর্তি করানো হচ্ছে ২১০ জন করে শিক্ষার্থী। এদিকে সেশনজটের কারণে অনুষদে এখন পাঁচটি ব্যাচ চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।

সেই হিসেবে ৩২ জন শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষার্থী সংখ্যা এখন এক হাজার ৫০ জন। বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়ের জন্য যেখানে শিক্ষক–শিক্ষার্থীর অনুপাত ন্যুনতম ১:২০ থাকা বাঞ্ছনীয় সেখানে রয়েছে ১:৩৩, যা গুণগত শিক্ষার মানোন্নয়নে অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ পরিস্থিতিতে গত বছরের শেষে তিন বিভাগে সাত জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। তবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৯ মাস অতিবাহিত হলেও তা সম্পন্ন হয়নি এখনো।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো.মাহাবুব হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে গবেষণা, জ্ঞান সৃষ্টি ও জ্ঞান বিতরণের জায়গা। আর স্কুল, কলেজ হলো শুধুমাত্র জ্ঞান বিতরণের জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা হবে, জ্ঞান সৃষ্টি হবে, শিক্ষার্থীরা স্ব-স্ব কর্মক্ষেত্রের জন্য নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলবে, এটাই স্বাভাবিক। প্রফেসররা হবেন জ্ঞান আর গবেষণার আধার, বিশ্ববিদ্যালয়ের অলংকার। অনেকটা বটবৃক্ষের মতো। যাদের জ্ঞানের শাখা-প্রশাখা সর্বত্র বিস্তৃত। তাঁদের সান্নিধ্যে থাকতে পারাটাও সৌভাগ্যের। কেননা, তাঁরা প্রতিটি বিষয় ভালো বোঝেন এবং জানেন। বিভাগে একজন অধ্যাপক থাকলে তরুণ শিক্ষকরা যেমন তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে ,অভিজ্ঞতা সঞ্চার করতে পারে ঠিক তেমনি বিভাগ পরিচালনার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাবেক উপাচার্য স্যারের আমলে আমিসহ আরও কয়েকজন বেশ কয়েকবার সরাসরি অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক নিয়োগের কথা বলেছিলাম। স্যারও বেশ আন্তরিক ছিলেন। কিন্তু আভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে তা আর বাস্তবায়ন  হয়নি।’

জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মু. আবুল কাসেম বলেন, ‘অধ্যাপক পদ একটি ধারাবাহিক পদোন্নয়ন প্রক্রিয়া। যার যোগ্যতা থাকবে সে অটোমেটিক্যালি এই পদে চলে আসবে। আর কারো পদায়নে তো বাধাগ্রস্ত করা হয়নি। সরাসরি অধ্যাপক পদে নিয়োগ দিতে হলে সেটা অর্গানোগ্রামে থাকতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন থাকতে হবে, এরপর বিজ্ঞাপন দিতে হবে- তারপর নিয়োগ হবে। এরজন্য ডীনকে  বলতে হবে। নিয়োগ একটি চলমান প্রক্রিয়া, এটি কখনো থেমে থাকবে না। আমি থাকি বা না থাকি নিয়োগ হবে।’