মন্ত্রণালয়ের অবহেলা আর শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন— ভোগান্তিতে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা
শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা তুলে না দেয়া এবং এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষকদের দেয়া অনির্দিষ্টকালের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন— এ দুটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে তার বিরূপ ফল ভোগ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মন্ত্রণালয়ের অবহেলা আর শিক্ষকদের আল্টিমেটামের কারণে শিক্ষার্থীদের বড় ধরণের সেশনজটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি সকল ধরনের ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ডাক দেয়। এরপর দিন থেকে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখেন তারা। এর আগে একই দাবিতে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও আল্টিমেটাম দিয়ে কোন সমাধানে যেতে না পারায় এ কর্মসূচির ডাক দেন শিক্ষক নেতারা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ওয়াহিদুজ্জামান এর সময় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল নোবিপ্রবির সব পর্যায়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই স্থগিত আদেশের দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সে আদেশ তুলে নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক ও কর্মকর্তা সংকট চললেও নতুন করে নিয়োগ দিতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া অস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত অর্ধশতাধিক শিক্ষক দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও কোন পদোন্নতি পায়নি। এদিকে ,তাদের পরবর্তীতে স্থায়ী পদে নিয়োগপ্রাপ্তরাও পদোন্নতি পেয়ে গেছেন। ফলে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন অস্থায়ী শিক্ষকরা।
শিক্ষক সমিতির মতে, এসবের সমাধান চেয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো দিদার-উল- আলমের কাছে গেলে উনি শুধুই আশ্বাস দেন। তবে এর কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি। এরফলে অস্থায়ী শিক্ষকদের দাবির প্রেক্ষিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষক সমিতি আশা করছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে পুনরায় শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে সহায়তা করবে।
এদিকে, শিক্ষা কার্যক্রম থেকে একমাসেও বেশি সময় ধরে দূরে থাকলেও শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করছে না কোন মহলই। বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনায় পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা এ কারণে আরও পিছিয়ে পড়ছেন বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। তাদের মতে, মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টির অভাবে উপাচার্যের মন্ত্রণালয় থেকে সমাধান আনতে না পারা এবং শিক্ষক সমিতি কর্তৃক সমাধানের দিকে চেয়ে থাকা তাদের চরম ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
শিক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে রেখে শিক্ষার্থীদের ক্ষতির মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম আরো পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে দারি তাদের। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মেসী বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত বাদশা বলেন, করোনায় দীর্ঘদিন বাসায় থেকে পড়াশোনার সাথে আমাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অনলাইন ক্লাসের ফলে কিছুটা হলেও নতুন করে পড়াশোনায় ফিরেছি। তবে শিক্ষকদের স্থগিতাদেশের ফলে আবার আমরা ক্ষতির দিকে যাচ্ছি। এদিকে পূর্বের সেমিস্টারের কিছু কার্যক্রম বাকি থাকা অবস্থায় নতুন সেমিস্টার শুরু হয়েছে। সে অবস্থাতে এসেছে স্থগিতাদেশ।
তিনি বলেন, আমার আহবান থাকবে শিক্ষার সাথে সংযোগ রাখতে আবার শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হোক। আর তা না হলেও আমাদের পূর্বের সেমিস্টারের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে হলেও ক্ষতি থেকে কিছুটা বাচানো দরকার।
শুধু এই শিক্ষার্থীই নয়, বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, নিজেদের শিক্ষা কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে শঙ্কিত রয়েছেন তারা। তারা চায়, দায়িত্বশীল মহল থেকে তাদের পক্ষে কোন সিদ্ধান্ত আসুক।
এ ব্যাপারে নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা কোন ফলাফল পায়নি। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। তাছাড়া এই সিদ্ধান্তে কোন পরিবর্তন আসবে কিনা, তা পরবর্তী কার্যকরী পরিষদের বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো দিদার-উল- আলম বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হয়ে দাপ্তরিক কার্যক্রম থেকে দূরে থাকায় এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। তারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে অফিসে ফিরলে নোবিপ্রবির নিয়োগ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানতে গেছে।
এদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট পর্যায়ের কোন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বক্তব্যে দিতে রাজি হননি।