বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পরিপন্থী সিদ্ধান্ত নোবিপ্রবির ইংরেজি বিভাগে
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) ইংরেজি বিভাগের একাডেমিক কমিটি কর্তৃক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পরিপন্থী সিদ্ধান্ত নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত রোববার (১১ অক্টোবর) ইংরেজি বিভাগ প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এমন আইন বিরোধী সিদ্ধান্তের বিষয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের নজরে আসে।
বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক আফসানা মৌসুমি স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর জ্ঞাতার্থে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ইংরেজি বিভাগের কতিপয় শিক্ষার্থী বিভাগের শিক্ষকদের অসম্মান করে আপত্তিকর মন্তব্য বা এধরনের নিউজ শেয়ার বা সমর্থন করে অভিব্যক্তি প্রকাশ করে যা খুব অনাকাঙ্ক্ষিত ও বেদনাদায়ক।
বিভাগের সর্বশেষ একাডেমিক কমিটির সভায় শিক্ষকগণ এমন অশোভন ও ঔদ্ধ্যত্বপূর্ণ আচরণকারীদের পাঠদানে বিব্রত ও অনীহা প্রকাশ করায় সভার সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে এসব চিহ্নিত শিক্ষার্থীদের চলমান ক্লাস বর্জন কর্মসূচি শেষে পুনরায় ক্লাস চালুর দিন থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য সব রকম শ্রেণি কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার নির্দেশ প্রদান করা হলো। বিভাগের অধিকাংশ বোধসম্পন্ন সচেতন শিক্ষার্থীদের উপর আস্থা রেখে অন্যান্যদের শ্রেণি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইংরেজি বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত উক্ত বিজ্ঞপ্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিবিরুদ্ধ। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্ধারিত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে প্রকাশিত গেজেট-এর বিভাগ পরিচালনার নিয়ম সম্বলিত ২৫ নং ধারার ৬ নং উপধারা অনুযায়ী বিভাগীয় চেয়ারম্যান সংবিধি ও বিশ্ববিদ্যালয় বিধান দ্বারা নির্ধারিত ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবেন।
আবার নোবিপ্রবি রিজেন্ট বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃংখলা বিধি অনুযায়ী বিভাগীয় প্রধান চাইলে সতর্কীকরণ, সর্বমোট ১ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারবে। তবে এই সিদ্ধান্ত আবার বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য কর্তৃক পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে।
তবে আইন অনুযায়ী এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে ওই বিভাগের চেয়ারম্যান আফসানা মৌসুমি বলেন, একাডেমিক কমিটি চাইলেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তাদের ক্ষমতা আরো অধিক বলেও মনে করেন এই অধ্যাপক।
এদিকে বিজ্ঞপ্তির বিরোধিতা করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ সহ বিভিন্ন বিভাগের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তুমুল সমালোচনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের ২০১৩-১৪ বর্ষের শিক্ষার্থী রবিউল আউয়াল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “স্বৈরতান্ত্রিক অধ্যাপক?
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা কাকে পড়াবেন কাকে পড়াবেন না সেটা ঠিক করছেন। উনি তো নোটিশ লিখতেও জানেন না বলে মনে হচ্ছে। ভাষাটা কোন প্রাতিষ্ঠানিক ভাষা নয়। উনি কোন নাম প্রকাশ করেননি যা জবাবদিহিতার সীমা লঙ্গন। একটি কার্যকরী সভার সিদ্ধান্ত এমন ন্যাক্কারজনক। এই বিভাগের অপরাপর শিক্ষকরা এতে রাজি হইছেন? ছিঃ! এটা গ্রাম্য সালিশের মতন শোনাইলো। অশ্লীল এবং অন্যায়মূলক। নিন্দা জানাই। ছিঃ অধ্যাপক। ক্ষমতাবলয়ের সাথে থাকতে থাকতে আপনাদের মস্তিষ্ক একটি আবর্জনায় পরিণত হয়েছে।”
এগ্রিকালচার বিভাগের ২০১৪-১৬ বর্ষের শিক্ষার্থী অহি আলমও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বলেন, সিরিয়াসলি ম্যান!!! এখন তো মনে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের আর রিয়েল আইডি চালানো যাবে না। মত প্রকাশের কোন অধিকারই থাকছে না তাদের। নিউজে তো খারাপ কিছু ছিল না। যা বাস্তবে ঘটচ্ছে সেটাকেই রসিয়ে লিখা ছিল।
তিনি আরও বলেন, আমি কোন শিক্ষক বা শিক্ষিকাকে অসম্মান করি না, তাদের স্থান আমার মা-বাবার পড়েই। কিন্তু তাঁরাই আমাকে শিখিয়েছেন যেটা ভুল, সেটা ভুল। নিউজ শেয়ার দেবার জন্য বা সেটাকে সমর্থন করার জন্য এ শাস্তি অযৌক্তিক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরোধী। প্রত্যেকের অধিকার আছে তার নিজের মতামত এবং অভিব্যক্তি প্রকাশ করার।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে আফসানা মৌসুমি জানান, একটি প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির নানা প্রতিক্রিয়া আসতেই পারে। এমন অভিজ্ঞতার শিকার আমাকে ইতোপূর্বেও হতে হয়েছে। এর নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা এমন করে থাকলে আমি নিজেকে বলবো একজন ব্যর্থ শিক্ষক! এসময় তিনি শিক্ষকদের কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আইন অনুসরণের বিষয়টি উপেক্ষা করে যান।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, যদি কোনো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা-বিধি ভঙ্গ করে তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠনতন্ত্রে বিভাগীয় চেয়ারম্যান, একাডেমিক কমিটি কি কি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন তা স্পষ্ট করে বলা আছে।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, যদি কোনো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা-বিধি ভঙ্গ করে তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠনতন্ত্রে বিভাগীয় চেয়ারম্যান, একাডেমিক কমিটি কি কি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন তা স্পষ্ট করে বলা আছে।