১১ অক্টোবর ২০২০, ২০:০৭

সবাই পালিয়ে গেল, রাসেল এসে বলল— ‘আবরার ঘুমোচ্ছে’

আবরার ফাহাদ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। আজ রবিবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বুয়েট কোয়ার্টারের সহকারী চিফ মেডিক্যাল অফিসার ডা. মাসুক এলাহী।

নির্যাতনে আবরার ফাহাদ যখন মৃত, তখন লাশ হল থেকে সরাতে বুয়েট ছাত্রলীগের (বহিষ্কৃত) সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল চাপ দিচ্ছিলেন বলে আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন। জবানবন্দি শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তার জেরা করেন। এ নিয়ে মামলায় মোট ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে পাঁচজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলো।

জবানবন্দিতে ডা. মাসুক এলাহী বলেন, আবরার হত্যাকাণ্ডের রাতে বুয়েটের উত্তর গেটে ১০/১৫ জন ছাত্র এম্বুল্যান্স ঘিরে ধরে এবং আমাকে দ্রুত অক্সিজেন ও স্ট্রেচার নিয়ে যেতে বলে। আমি তখন বলি, আগে রোগী দেখব। তারপর শেরে বাংলা হলের উত্তর ব্লকের সিড়ির দিকে নিয়ে যায়। সিড়ির একতলা ও দোতলার মাঝে যে জায়গা থাকে সেখানে আবরার ফাহাদের শোয়ানো দেখি। তার শরীরে চেক শার্ট ও পরনে কালো টাউজার পড়া ছিল। টাউজার ও তোশকে প্রস্রাবে ভিজা ছিল।

প্রথম দর্শনেই আবরারকে মৃত মনে হয়। এরপর তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করি। তার পালস, ব্লাড প্রেসার, শ্বাস প্রশ্বাস পাওয়া যাচ্ছিল না। তারপর স্টেথোস্কোপ দিয়ে হার্ট সাউন্ড শোনার চেষ্টা করি কিন্তু হার্ট সাউন্ড ছিল না। টর্চ দিয়ে চোখ পরীক্ষা করি। এরপর আবরারকে মৃত ঘোষণা করি।

জবানবন্দিতে তিনি আরো বলেন, আবরারকে মৃত ঘোষণা সঙ্গে সঙ্গে পাশে যারা ছিল তারা সবাই পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের (বহিষ্কৃত) সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল আসে। সে আবরারকে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যেতে বলে। আমি তখন বলি, আবরার মৃত। তাকে মেডিক্যালে নিয়ে লাভ নাই। তাকে দ্রুত পুলিশে হস্তান্তর করতে হবে। রাসেল বলে, সে মারা যায়নি। সে ঘুমাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগেও সে কথা বলেছে। বারবার তাকে মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলতে থাকেন। আমি ফের রাসেলকে একই কথা বলি।

এরপর রাত তিনটার দিকে হলের প্রভোস্ট জাফর ইকবাল খানকে ফোন দিয়ে আবরারের মৃত্যুর সংবাদ জানাই এবং তাকে হলে আসতে বলি। এর ১০/১৫ মিনিটের মধ্যে প্রভোস্ট, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক শাহিনুর রহমান, সহকারী প্রভোস্ট ইফতেখার হলে আসেন। এরপর তারা রাসেলের নির্দেশে আবরারকে হলের নিচ তলার বারান্দায় নিয়ে যায়। তখন একজন শিক্ষার্থীর কাছে থেকে চাদর নিয়ে আবরারের লাশটি ঢেকে দিই।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি থেকে অচেতন অবস্থায় আবরার ফাহাদকে উদ্ধার করা হয়। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ হত্যা মামলা করেন।

গত ৫ অক্টোবর এ মামলার বাদী ও আবরারের বাবা বরকতুল্লাহর আদালতে সাক্ষ্য দেন। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। আগামী ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে এ সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে