তদন্ত কমিটিতেই আটকে আছে ব্যবস্থা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে তদন্ত কমিটি ও বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটি স্বাভাবিক ঘটনা। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও এসব বিষয়ে তদন্ত কমিটি ও বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু গত এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিভিন্ন কারণে প্রায় ৮টি তদন্ত কমিটি এবং দুটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসকল কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অন্তত ৮টি তদন্ত কমিটি, একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসকল কমিটির মধ্যে মাত্র দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

অবশিষ্ট ছয়টি তদন্ত কমিটির মধ্যে রয়েছে, ২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আইন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং আলোকিত বাংলাদেশের তৎকালীন বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি শামস জেবিনের ওপর হামলার তদন্ত কমিটি, একই ঘটনায় ২০ অক্টোবর গঠিত পুনঃতদন্ত কমিটি, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আক্কাছ আলীর বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে ২১ নভেম্বর গঠিত তদন্ত কমিটি, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে এক নেপালী শিক্ষার্থীর যৌন হয়রানির অভিযোগের প্রেক্ষিতে নভেম্বরে গঠিত তদন্ত কমিটি, আইন বিভাগ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া এবং মারামারির ঘটনায় ২ ফেব্রুয়ারী গঠিত তদন্ত কমিটি এবং সর্বশেষ বশেমুরবিপ্রবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী থেকে কম্পিউটার চুরির ঘটনায় চলতি বছরের ৯ আগস্ট গঠিত তদন্ত কমিটি।

এছাড়া দুটো বিশেষজ্ঞ কমিটির মধ্যে রয়েছে- বশেমুরবিপ্রবির ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইটিই) বিভাগকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের সাথে একীভূতকরণের উদ্দেশ্যে বিশেষজ্ঞ মতামতের জন্য ২০ জানুয়ারি গঠিত কমিটি এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক বশেমুরবিপ্রবিতে ইতিহাস বিভাগ খোলা, বিদ্যমান সমস্যাবলি পর্যবেক্ষণ ও চিহ্নিতকরণ ও শিক্ষা নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে ১৮ ফেব্রুয়ারী গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি।

এসকল তদন্ত কমিটির মধ্যে আইন বিভাগ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মধ্যকার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং মারামারির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ব্যতিত প্রায় সকল তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। অপরদিকে দুটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মধ্যে একটি কমিটির সদস্যদের প্রদানকৃত মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করা হলেও ইউজিসি কতৃক গঠিত কমিটির কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় স্থগিত রয়েছে।

এদিকে, একের পর এক তদন্ত কমিটি গঠন হলেও ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরাও। ইটিই বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান মোল্লা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, “তদন্ত কমিটি গঠন আর বিচারের আশ্বাস প্রদান আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি দুঃখজনক বিষয়। এখন পর্যন্ত কোন আন্দোলন বা যৌক্তিক দাবি তদন্ত কমিটির মাধ্যমে সমাধান হয়নি বরং তদন্ত কমিটির মাধ্যমে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। তাই আমরা এই তদন্ত কমিটি নামক প্রহসন থেকে মুক্তি চাই।”

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেয়ার পরেও কেনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি এমন প্রশ্নের উত্তরে বশেমুরবিপ্রবির রেজিস্ট্রার ড. নূরউদ্দিন আহমেদ বলেন, “প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে শৃঙ্খলা বোর্ড ব্যবস্থা গ্রহণ করে। শৃঙ্খলা বোর্ডের প্রধান উপাচার্য, আমার দায়িত্ব তিনি প্রতিবেদন চাওয়ার পর তার নিকট প্রতিবেদন পৌঁছে দেয়া। এখন পর্যন্ত শৃঙ্খলা বোর্ডের পক্ষ থেকে যে প্রতিবেদনগুলো চাওয়া হয়েছে সেগুলো জমা দেয়া হয়েছে।”

এ বিষয়ে (২০১৯ সালের ৮ অক্টোবর থেকে থেকে ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালনকারী অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান বলেন, “যে বিষয়গুলো শৃঙ্খলা বোর্ডে সমাধান করা সম্ভব ছিলো সেগুলো আমরা সমাধান করেছি। কিন্তু কিছু বিষয় সমাধানের জন্য রিজেন্ট বোর্ডের মিটিং প্রয়োজন ছিলো। রুটিন দায়িত্ব পালনকালে রিজেন্ট বোর্ডের মিটিং আয়োজন সম্ভব নয়। তাই এসকল বিষয় সমাধান করা সম্ভব হয়নি।”

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কিউ এম মাহবুব দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, “মাত্র দু সপ্তাহের মত হলো আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আপাতত বার্নিং ইস্যুগুলো সমাধান করছি। শিক্ষার্থীদের অনেক ফলাফল আটকে আছে; সেগুলো দ্রুত দেয়ার চেষ্টা করছি। এছাড়া আগামী মাসে একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং অনুষ্ঠিত হবে। এরপর রিজেন্ট বোর্ডের মিটিং অনুষ্ঠিত হবে।”


সর্বশেষ সংবাদ