এটিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ
চারদিকে বড় বড় ঘাস আর ঝোপঝাড়ের মাঝে ছাউনিযুক্ত একটি টিনশেড ভবন। ভবনের উদ্দেশ্যে সামনে এগোতেই দেখা মিলল মাঝারি আকারের একটি সাপের। প্রথম দর্শনে যে কারো মনে হবে ভবনটি হয়তো একটি পরিত্যক্ত ভবন।
এখানেই তিন বছর ধরে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভাগটিতে তিনটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষসহ শিক্ষকদের কক্ষ এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের জন্য মাত্র দুটি কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর অপর কক্ষটিতে কাঠের পার্টিশন দিয়ে একাংশ শ্রেণিকক্ষ এবং অপর অংশ শিক্ষকদের কক্ষসহ প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা হয়।
শ্রেণিকক্ষ হিসেবে যে কক্ষটি ব্যবহৃত হয় সেটির ভেতরে গিয়ে দেখা গেল, টিনের ছাউনির নিচে দেওয়া বেড়ার একটি অংশ ভেঙে ঝুলে আছে। ক্লাস করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা যেকোন সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। ভবনটির মেঝেতে শিক্ষার্থীদের বসা এবং ব্যাগ রাখার বেঞ্চ রয়েছে। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় এসব আসবাবপত্রে ধুলাবালি জমে গেছে।
বিভাগটির চেয়ারম্যান তছলিম আহম্মদ বলেন, কক্ষ সংকটের জন্য বিভাগটিতে শিক্ষকদের এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের জন্য কোনো আলাদা কক্ষ নেই। একটি কক্ষেই সবাইকে বসতে হয়। এছাড়া চারপাশের অবস্থার কারণে ক্লাস চলাকালীন সময়ে প্রায়ই শ্রেণিকক্ষে কুকুর, গরু-ছাগল এমনকি মাঝে মাঝে সাপও ঢুকতো। একবার শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ থেকে একটি বড় আকারের সাপ মেরেছেও। এরপর গত মার্চে আমরা নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু বিষয়টির কোনো সমাধান হয়নি।
তিনি বলেন, এখানে শিক্ষক-শিক্ষাথী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকলের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। যদি ক্লাসে এসে কিংবা অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা করতে এসে সাপের কামড়ে কারো মৃত্যু হয় আমরা তখন কি উত্তর দিবো?
তবে শুধুমাত্র সাপ কিংবা গবাদি পশুর উপদ্রব নয়; বিভাগটিতে রয়েছে চোরের উপদ্রবও। বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনের অংশে অবস্থিত হওয়ায় বিভাগটিতে নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। আর এই দূর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফলে সম্প্রতি এই বিভাগ থেকে দুটি কম্পিউটার চুরি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে বিভাগটি থেকে মাত্র দশ হাত দূরে একটি খোলা টয়লেট আর পাঁচ হাত দূরে নির্মাণ শ্রমিকদের একটা ঝুপড়ি ঘর দেখতে পাওয়া গেছে।
তছলিম আহম্মদ জানান, নিরাপত্তাহীনতার কারণে বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) প্রিন্টার, ল্যাপটপ এবং শিক্ষার্থীদের সনদপত্রসহ বিভাগের মূল্যবান দ্রব্যাদি রেজিস্ট্রার দপ্তরে হস্তান্তর করেছেন।
এদিকে, শ্রেণিকক্ষ সংকট ছাড়াও বিভাগটিতে রয়েছে শিক্ষক সংকটও। বিভাগটি থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ১৭৬ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে বিভাগটিতে শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র চারজন। যাদের মধ্যে দুজন শিক্ষাছুটিতে রয়েছেন। ফলে মাত্র দুজন শিক্ষকের পক্ষে এতো অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কিউ এম মাহবুব বলেন, বিভাগটির এসব সমস্যার বিষয়ে আমি অবগত হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মানাধীন ভবনসমূহ তৈরির পর এবং নতুন শিক্ষক নিয়োগের পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বিভাগটির আশপাশের ঝোপঝাড় পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করা হয়েছে। বিভাগের টয়লেট ও ঝুপড়িগুলোও সরিয়ে ফেলা হবে বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে যাত্রা শুরু করে বশেমুরবিপ্রবির ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। বর্তমানে তিনটি ব্যাচে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছেন।