১৩ মাস যাবৎ বেতন বন্ধ, সন্তানের খাবারটুকু কেনার সামর্থ্য নেই
‘‘দেশে চলমান করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে স্বামীর আয় বন্ধ, শ্বশুর শাশুড়ি বৃদ্ধ হওয়ায় তাদেরও আয় করার সামর্থ্য নেই। এদিকে ১৩ মাস হলো আমিও বেতন পাচ্ছি না। বর্তমানে আমাদের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, সন্তানের জন্য খাবারটুকুও কিনতে পারছি না”- কথাগুলো বলছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মচারী শারমিন খানম। শুধুমাত্র তিনিই নন একই অবস্থায় রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৭৬ জন দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মচারী।
১৩ মাসের বকেয়া বেতন এবং স্থায়ী নিয়োগের দাবিতে টানা দ্বিতীয় দিনের মত এসকল কর্মচারীরা মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
শারমিন খানমের মত অনেকটা একই অবস্থা উল্লেখ করে দৈনিক মজুরি ভিত্তিক আরেক কর্মচারী নিবা রানী হালদার বলেন, “আমার স্বামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মচারী ছিলেন, কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। এরপর আমাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন আমাদের একাধিকবার স্থায়ী নিয়োগের আশ্বাস দিয়েছিলেন কিন্তু সেটি তিনি বাস্তবায়ন করেননি। আর এই নিয়োগসংক্রান্ত জটিলতার ফলেই বিগত ১৩ মাস যাবৎ আমাদের বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে।”
এসময় তিনি আরও বলেন, “আমার পরিবারে আমিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আমার দুই বছরের একটি সন্তান রয়েছে, শ্বশুর অসুস্থ। বর্তমানে অর্থের অভাবে খুবই দূরাবস্থায় দিন কাটাচ্ছি।”
এদিকে অবস্থান কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি কর্মচারীরা তাদের দুই দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আজ উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন।
তবে বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য প্রফেসর ড. এ.কিউ.এম মাহবুব জানিয়েছেন, তিনি এখন পর্যন্ত কোনো স্মারকলিপি পাননি। তবে কর্মচারীদের সমস্যার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত রয়েছেন।
এসময় কর্মচারীদের সমস্যার সমাধানের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা দুই তিনদিনের মধ্যে এ বিষয়ে একটি মিটিং করবো এবং তারা কিভাবে নিয়োগ পেলো, কে কাজে কতটা দক্ষ এসকল বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।”
প্রসঙ্গত, নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতায় বেতন বন্ধ থাকায় গত নভেম্বর থেকে আন্দোলন শুরু করেন বশেমুরবিপ্রবির দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মচারীরা। কিন্তু প্রায় ১০ মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। ইতোপূর্বে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষ থেকে দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মচারীর সংখ্যা কমানোর পরামর্শ দিয়েছিলো।