১৯ জুলাই ২০২০, ১১:৩৭

‘প্রচন্ড হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি— মনে হচ্ছে, সবকিছুই শেষ হয়ে গিয়েছে’

ইতিহাস বিভাগের অনুমোদনের দাবিতে আন্দোলন। কয়েকমাস আগের ছবি  © ফাইল ফটো

‘ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হবো। তাই অনেক স্বপ্ন নিয়ে পরিবারের বিপক্ষে গিয়ে ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন জানলাম, বিভাগটির অনুমোদনই নেই। পরিবার থেকে প্রতিনিয়ত কথা শুনতে হচ্ছে। প্রচন্ড হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি, মনে হচ্ছে আমার জীবনের সবকিছুই শেষ হয়ে গিয়েছে।’ কথাগুলো বলছিলেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ইতিহাস বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ পলাশ হাসান।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন ছাড়াই প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে বশেমুরবিপ্রবিতে যাত্রা শুরু করে এই বিভাগটি। বর্তমানে বিভাগটিতে অধ্যয়নরত আছেন ৪১২ জন শিক্ষার্থী। কিন্তু তিন বছরের বেশি সময় পার হলেও এখনও বিভাগটির অনুমোদন দেয়নি ইউজিসি। 

এরইমধ্যে গত ৬ ফেব্রুয়ারি একটি চিঠিতে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি না করানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপর থেকে শিক্ষার্থীরা বিভাগটির অনুমোদনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করলেও এখন পর্যন্ত ইউজিসি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেনি। ফলে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা।

ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আফতাব জামান জানান, ‘আমরা নিজেদের মেধা এবং যোগ্যতা দিয়েই এই বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন প্রশাসনের ভুলের কারণে আমাদের প্রতিনিয়ত সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। পরিবার এবং বন্ধুদের নিকট ছোট হতে হচ্ছে। ভবিষ্যৎ নিয়েও আমরা খুবই অনিশ্চয়তায় ভুগছি।’

এছাড়া, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অনেক বিভাগ অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করলেও এখনও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের একটি অংশ মনে করছেন, তাদের অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করা উচিত। আবার অপর অংশ বিভাগের অনুমোদন পাওয়ার পূর্বে কোনও ধরনের ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চাইছেন না।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু ইনস্টিটিউট অব লিবারেশন ওয়ার অ্যান্ড বাংলাদেশ স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক মোছা. সানজিদা পারভীন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু তারা এখনও বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে।’

বিভাগটির অনুমোদন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) ড. মোঃ শাহজাহান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি বিভাগটির অনুমোদন পাওয়ার। ইউজিসি মৌখিকভাবে কখনও কখনও এ বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করছে, কিন্তু এখনো কোনও চিঠি পাঠায়নি।’

ইতিহাস বিভাগ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে গঠিত সাত সদস্যের কমিটির প্রধান ড. দিল আফরোজ বেগম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কিছু করা সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি শেষে তারা এ বিষয়ে কাজ করবেন বলে জানান।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ ফেব্রুয়ারী ইতিহাস বিভাগের অনুমোদন সংক্রান্ত জটিলতাসহ বশেমুরবিপ্রবির চলমান অন্যান্য সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে প্রফেসর ড. দিল আফরোজ বেগমকে প্রধান করে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে ইউজিসি। কমিটির অন্যান্য ছয় সদস্য হলেন প্রফেসর ড. মোঃ আলমগীর হোসেন, প্রফেসর ড. মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক প্রফেসর ড. কামাল হোসেন (সদস্য সচিব), বশেমুরবিপ্রবির চলতি উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শাহজাহান, রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মোঃ নূরউদ্দিন আহমেদ এবং জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এম এ সাত্তার।

কমিটিকে স্বল্পতম সময়ে রিপোর্ট প্রদান করার নির্দেশ দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত উক্ত কমিটি কোনো রিপোর্ট প্রদান করেনি।