যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোথাও কেউ নেই
উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং ট্রেজারার; চ্যান্সেলর নিয়োগ দেবেন এমন তিনটি পদই শূন্য রয়েছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি)। উপাচার্য পদ থেকে বিগত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগ করেন। এরপর প্রায় ৯ মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোঃ শাহজাহান উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন।
আর বাকি দুটি পদে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত নিয়োগ প্রদান করা হয়নি। শুধু এই তিন পদই নয়, শূন্য রয়েছে অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক, প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা, একুশে ফেব্রুয়ারি লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিনের পদও। এছাড়া রেজিস্ট্রারসহ চারটি অনুষদের ডিন পদে নিয়োগকৃতদের সকলেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত।
বশেমুরবিপ্রবি অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালকও অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত। এখানেই শেষ নয় বশেমুরবিপ্রবির শূন্যতার তালিকা। তিনটি ইনস্টিটিউটের মধ্যে দুটি ইনস্টিটিউটেরই গভর্নিং বডি নেই। একটি বিভাগের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক অনুমোদনই নেই। ২৯টি বিভাগে নেই অধ্যাপক। আর তিনটি বিভাগ এবং একটি ইনস্টিটিউটের নেই নিজস্ব কোনো শিক্ষক। গেস্ট টিচারের মাধ্যমেই চলছে এসকল বিভাগ ও ইনিস্টিউটের শিক্ষা কার্যক্রম।
এসবের বাইরে ঘাটতি রয়েছে ক্লাসরুম, ল্যাবরুম এবং আবাসনের ক্ষেত্রেও৷ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৩৪টি বিভাগের মধ্যে অন্তত ২০টি বিভাগের ক্লাসরুম সংকট রয়েছে এবং ১০টি বিভাগের ল্যাব সংকট রয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে পাঁচটি হলে আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন মাত্র দুই হাজার শিক্ষার্থী, যা শতকরা হিসেবে মাত্র ১৬ শতাংশ। তবে এসকল হলেও রিডিং রুম না থাকা, হল লাইব্রেরি না থাকাসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নিয়েও।
আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী উজ্বল মন্ডল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক বিষয় যে, প্রায় ১০ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মেইন গেট, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল এবং স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি। এমনকি নেই কোনো ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র বা ক্যান্টিনও।’
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান এই অবস্থার জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দায়ী করছেন সাবেক উপাচার্যের অপরিকল্পিত এবং স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তকেই। সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করেই একের পর এক নতুন বিভাগ খোলা এবং আসন সংখ্যা বৃদ্ধির ফলেই এসব সংকট তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
বিষয়গুলো সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. নূরউদ্দিন আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ পদেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। উপাচার্য নিয়োগ দেয়ার পর হয়তো এসকল বিষয়ের সমাধান হবে।’
এসময় তিনি উপ-উপাচার্য এবং ট্রেজারার নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে উপ-উপাচার্যের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে আমাদের যে পরিমাণ শিক্ষার্থী রয়েছে, তাতে এই পদে নিয়োগ দেয়া হলে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভালো হবে। আর ট্রেজারার থাকলে উপাচার্য এককেন্দ্রীক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না এবং সমন্বিত সিদ্ধান্তের ফলে সিদ্ধান্তগুলোও সুদূরপ্রসারী হয়।’
উল্লেখ্য, বশেমুরবিপ্রবি ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে সাতটি অনুষদ এবং তিনটি ইনিস্টিউটের অধীনে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত আছেন।