সেশনজট নিরসনে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ভাবনা
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষাকার্যক্রম। আর এর ফলে ক্লাসরুম সংকট, ল্যাব সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে সেশনজট আতঙ্ক।
সেশনজট নিরসনে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান করা হলেও সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ অনিশ্চিত থাকায় এখনো এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি বশেমুরবিপ্রবি প্রশাসন। এমন পরিস্থিতিতে সেশনজট নিরসনে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে নিজেদের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন বশেমুরবিপ্রবির ৬ শিক্ষার্থী।
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, ‘‘দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো পুনরায় কবে চালু হবে সেটা অনিশ্চিত এবং এর ফলে সকল প্রতিষ্ঠানকেই সেশনজটের সম্মুখীন হতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের দেশে অনলাইন ক্লাস করাটা অনেকটা স্বপ্নের মত হলেও সেশনজট মোকাবেলা করতে হলে আমাদেরকে এই অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনারই উদ্যোগ নিতে হবে।’’
ইন্টারনেট ব্যয়ের বিষয়টি উল্লেখ করে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘ইতোমধ্যে সরকার ভ্যাট আরোপ করায় আমাদের অনলাইন ক্লাসের প্রধান উপকরণ ইন্টারনেটের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে অনেক শিক্ষার্থীর নিয়মিত ক্লাস করা কঠিন হবে। এক্ষেত্রে যদি নির্দিষ্ট বিভাগের শিক্ষকগন তাদের ক্লাসটির উপর ভিডিও তৈরি করে নির্দিষ্ট কোনো প্লাটফর্মে সেটা আপলোড করেন তাহলে বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জন্য তুলনামূলক সহজ হবে এবং ইন্টারনেটের ব্যয় ও স্পিড সংক্রান্ত সমস্যাগুলো অনেকাংশে দূর হবে।’’
অনলাইন ক্লাসকে একমাত্র বিকল্প উল্লেখ করে ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষার্থী তাওহীদ ইসলাম বলেন, ‘‘সেশনজট নিরসনে অনলাইন ক্লাস-পরীক্ষা পদ্ধতির দিকে মনোযোগ দেয়া ছাড়া কোনো উপায় দেখতে পাচ্ছিনা। আর কিছু শিক্ষার্থী ছাড়া দিন শেষ প্রায় সবাই বাড়িতে নিয়মিত ইন্টারনেটে ব্যবহার করছে।’’
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক শিক্ষার্থীদের অনলাইন খরচ বহনের বিষয়টি উল্লেখ করে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় পানি, বিদ্যুত সহ বিভিন্ন খাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের মত খরচ হচ্ছে না এবং প্রশাসন চাইলে এসব খাতের অর্থ ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেটে খরচ বহন করে অনলাইন কার্যক্রম শুরু করতে পারে। আর আমাদের সকলের এটা মনে রাখতে হবে যে, বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছেন এই মহামারী আরো কয়েক বছর পৃথিবীকে বেঁধে রাখবে।’’
ছুটি কমানোর বিষয়টি উল্লেখ করে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী খোন্দকার নাহিদ বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে সেশনজট নিরসন টা অনেকটা জটিলতার দিকে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সেশনজট নিরসনে সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে অনলাইন ক্লাস। কিন্তু অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে অনেক রকম জটিলতা রয়েছে। তাই আমি মনে করি অনলাইন ক্লাস সম্ভব না হলে , পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে এবং ছুটি কমিয়ে সেই সময়টাতে ক্লাস নিয়ে সেশনজট কমানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।’’
খোন্দকার নাহিদের মত অনেকটা একই বিষয় উল্লেখ করে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান মাহমুদ বলেন, ‘‘আমাদের ক্যাম্পাস পুরোপুরি সেশন জোট মুক্ত ছিল কিন্তু করোনার কারণে এখন সেশনজট প্রায় নিশ্চিত।তাই আমরা চাই বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের শুক্র ও শনিবারে ক্লাস নিয়ে কোর্স গুলো দ্রুত কমপ্লিট করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। এছাড়া সরকারি ছুটি গুলো কমিয়ে এনে সেই দিন গুলোতেও ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করবে।’’
ছুটি কমানোর বিষয়টি উল্লেখ করে কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থী মুকুল আহমেদ রণি বলেন, ‘‘মহামারির কারণে যেহেতু সারা বিশ্বে স্থবির অবস্থা বিরাজ করতেছে, এইটুকু আমাদের কেও মেনে নিতে হবে! তবে সেশনজট নিরসনে আমরা কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। যেমন করোনা পরবর্তী সময়ে আমাদের সাপ্তাহিক ছুটি বাদ দিয়ে এবং বিভিন্ন সরকারি ছুটি কমিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারি। এছাড়া অনলাইন ক্লাসের বিষয়েও আমরা ভেবে দেখতে পারি। কিন্তু দেখা যায় অনেক শিক্ষার্থীরই যথার্থ নেটওয়ার্ক ব্যাবস্থা বা কারিগরি যে বিষয়গুলো দরকার সেগুলা নেই। এক্ষেত্রে, আমাদের প্রথমে এই বিষয়গুলো সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’’
তবে এসকল শিক্ষার্থীদের সাথে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেছেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হানুল ইসলাম সৈকত। এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নিলে অনলাইনে নিতে হবে, ক্লাসের ক্ষেত্রেও তাই। কিন্তু এটা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সাথে অন্যায় করা হবে, কারণ অনেকের স্মার্টফোন নেই এবং স্মার্টফোন কেনার সাধ্যও নেই। সারাদেশের নেটওয়ার্কের অবস্থাও ভাবতে হবে অনলাইনে ক্লাস পরীক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করলে। এছাড়া সেশনজট এড়ানোর জন্য আর যা করা যায়, সেটি হলো বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া যায়। কিন্তু সেটিও বুমেরাং ছাড়া কিছু হবে না। তাই এখন অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।’’