জন্মদিনে শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় সিক্ত হাবিপ্রবি উপাচার্য
দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মু. আবুল কাসেমের ৬৭তম জন্মদিন আজ মঙ্গলবার (১৬ জুন)। ১৯৫৩ সালের এই দিনে লালমনিরহাট জেলার বড়খাতার শেখ সুন্দর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতা মৃত মৌলভী নুর আহমেদ আকন্দ ও মৃত মাতা জমিরুন নেছার।
তাঁর ৬৭তম জন্মদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন তিনি। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেই উপাচার্যের জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় যখন নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত, প্রায় ৩ মাসের অধিক সময় যখন উপাচার্য শূন্য ক্যাম্পাস— ঠিক সেই সময়ে উন্নয়ন ও আলোর বার্তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়ে ক্যাম্পাসে আসেন অধ্যাপক ড. মু. আবুল কাসেম। কালক্রমে নামটি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ হাজার শিক্ষার্থীদের কাছে প্রিয়ময়। একইসাথে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকল সহকর্মীদের কাছেও।
সমস্যায় জর্জরিত ক্যাম্পাসে এসেই দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়কে আধুনিকায়ন ও আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি। সেই প্রত্যাশার কথাগুলো আজ বাস্তবায়িত। শতবাধা উপেক্ষা করে দায়িত্বের ৪ বছর শেষ হওয়ার আগেই সেশনজট অনেকটা কমিয়ে এনেছেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের চাহিদার প্রেক্ষিতে প্রতিবছর আয়োজন করা হচ্ছে আন্তঃবিভাগ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বৃক্ষমেলা, বইমেলা, স্থাপত্য প্রদর্শনীসহ বিতর্ক প্রতিযোগিতা। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের গুনগত শিক্ষাগ্রহণে অধ্যয়নের পরিবেশ এবং লেখাপড়ার পরিবেশকে করেছেন আরও মানসম্পন্ন। বিশ্ববিদ্যালয়কে সাজিয়েছেন আধুনিক স্থাপত্য শৈলী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের পরিবহনের জন্য তার মেয়াদে মাত্র সাড়ে তিন বছরে পরিবহন পুলে যুক্ত হয়েছে ১৩টি যানবাহন। একাডেমিক ল্যাবগুলো পেয়েছে নতুন যন্ত্রপাতি, সৃষ্টি হয়ে ভার্চুয়াল ক্লাসরুম। আবাসন ও শ্রেণি সংকট কমাতে নির্মিত হচ্ছে ১০ তলা বিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবন ও ৬ তলা বিশিষ্ট ছাত্রী হল। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের গুণগত শিক্ষাগ্রহণে অডিটোরিয়ামে করেছেন সভা-সেমিনার।
কৃষি গবেষণা কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেছেন “কৃষি, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ গবেষণা কমপ্লেক্স”। এ গবেষণা কমপ্লেক্সে ডেইরি, পোল্ট্রি, মৎস্য এবং শস্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গবেষণা করা হয়। বৃহত্তর দিনাজপুরের কৃষক পরিবারের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে “ভ্রম্যমান ভেটেনারি ক্লিনিক” চালু করেছেন তিনি। কৃষক পরিবারের গৃহপালিত গবাদি পশু প্রাণীর চিকিৎসা প্রদানের লক্ষ্যে সকল সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন অত্যাধুনিক ভ্রাম্যমান ভেটেনারি ক্লিনিকটি হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে প্রথম শুরু করে।
বৃহত্তর দিনাজপুরের কৃষকদের কৃষি সেবা প্রদানের লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন “কৃষক সেবা কেন্দ্র”। উপাচার্যের বাস্তবায়িত এই উদ্যোগও বাংলাদেশে প্রথম। বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের চাকরি, পিএইচডি, ফেলোশিপ, বিদেশে স্কলারশিপ ইত্যাদি সেবা এবং পরামর্শের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে “ক্যারিয়ার এডভাইজারী সার্ভিস” তিনি নিজ হাতে শুরু করেন। এই সার্ভিসের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া শিক্ষার্থীবৃন্দ তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে সঠিক দিকনির্দেশনা পাচ্ছেন।
এসব কাজের মাধ্যমে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের মাত্র সাড়ে তিন বছরের ব্যবধানে হাজারো শিক্ষার্থীর মনিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন অধ্যাপক ড. মু. আবুল কাসেম। আজ উপচার্য ও শিক্ষার্থীদের প্রিয় শিক্ষক ড. মু. আবুল কাসেমের ৬৭তম জন্মদিন। এবারের জন্মদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভার্চুয়াল ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন তিনি।
অনেকে তার জন্মদিন নিয়ে ফেসবুক লিখেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, আধুনিক হাবিপ্রবি স্বপ্নদ্রষ্টা, অনুপ্রেরণার বাতিঘরসহ নানান কথা। সবশেষে সবাই সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে উপাচার্যকে জানিয়েছেন জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তা।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকে ধন্যবাদ জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মু. আবুল কাসেম জানান, শিক্ষার্থীদের ভালোবাসাই আমার কাজের শক্তি। সবার শ্রদ্ধা, ভালোবাসা নিয়ে আমি আমার জীবনের বাকী সময়টুকু কাটাতে চাই। যে কয়দিন উপাচার্যের দায়িত্বে আছি সেই কয়টা দিনকে আমি কাজে লাগাতে চাই।
তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। হাবিপ্রবিকে আধুনিক ও আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করতে চাই। আমার এই উন্নয়নের কাজে সবাইকে আমি পাশে চাই।