গোপালগঞ্জে মেসে মেসে চুরি, আতঙ্কে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা
নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চলমান লকডাউনের মাঝেই গোপালগঞ্জ সদরে শিক্ষার্থীদের মেস ও ভাড়া বাসায় বেড়েছে চোরের উপদ্রব। গত এক মাসে সদরের বিভিন্ন এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের প্রায় ছয়টি মেসে চুরির ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ সোমবার (১৫ জুন) রাতে নবীনবাগে এক মেসের গ্রীল কেটে নগদ ১২ হাজার টাকা চুরি হয়েছে।
জানা গেছে, ১২ হাজার শিক্ষার্থীর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সুবিধা রয়েছে মাত্র দুই হাজার শিক্ষার্থীর। বাকি ১০ হাজার শিক্ষার্থী আবসিক হলের বাইরে মেসে কিংবা ভাড়া বাসায় থেকে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন। যাদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা সন্তান। করোনা-কালে টিউশন এবং খন্ডকালীন আয়ের ওপর নির্ভর করে চলা এসব শিক্ষার্থীদের জন্য মেস কিংবা বাড়ি ভাড়া দেওয়া অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। তার উপর বেড়েছে মেসে মেসে চোরের উপদ্রব। সব মিলিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন এসব শিক্ষার্থী।
সোমবার (১৫ জুন) রাতে নবীনবাগে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর একটি মেস থেকে নগদ ১২ হাজার টাকা চুরি হয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী আল মাহমুদ মুরাদ জানায়, হঠাৎ করে ছুটির ঘোষণার কারনে আমরা আমাদের সেমিস্টার ফি’র টাকা লকারে রেখে গিয়েছিলাম৷ কিন্তু আজ বাসা ছাড়ার জন্য এসে বিষয়টি দেখতে পেলাম। তিনি আরও জানান, মেসের ভেতর থেকে ছিটকানি লাগানো দেখে অবাক হয়। পরে বাসার মালিকের সাথে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশের পর দেখি সবকিছু ছড়ানো-ছিটানো।
এর আগে গত রবিবার (১৪ জুন) নবীনবাগ এলাকায় অপর একটি ছাত্রাবাস থেকে ১৫ হাজার টাকা, একটি ক্যামেরা, একটি ল্যাপটপ এবং দুটি ফোনসহসহ প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকার মালামাল চুরি হয়েছিলো। এ বিষয়ে মেসে থাকা বশেমুরবিপ্রবির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিজ ইমতিয়াজ আকাশ বলেন, লকডাউন এতদিন দীর্ঘ হবে আমরা বুঝিনি তাই অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র মেসে রেখে এসেছিলাম। পরবর্তীতে গত ১৩ জুন জানতে পারি মেসে চুরি হয়েছে এবং মেসে যাওয়ার পর দেখতে পাই প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকার মালামাল চুরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ছুটির সময়টায় কোনো সংঘবদ্ধ চক্র ছাত্রাবাসগুলোতে চুরির ঘটনা ঘটাচ্ছে কিনা সে বিষয়ে পুলিশের একটি তদন্ত করা উচিত। পাশাপাশি বাড়ির মালিক ও স্থানীয় কাউন্সিলের মধ্যে সমন্বয় করে এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত রোডলাইট ও সিকিউরিটি গার্ডের ব্যবস্থা করা উচিত। এছাড়া শিক্ষার্থীদেরও মূল্যবান জিনিসপত্র মেসে রেখে আসা উচিত নয়।
এছাড়া চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গোবরা এলাকায় দুটি এবং চৌরঙ্গী সংলগ্ন এলাকায় একটি মেসে চুরির ঘটনা ঘটেছে। গোবরা এলাকায় বসবাসকারী ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তাওহীদ ইসলাম বলেন, আমাদের রুম থেকে কম্পিউটার সিপিইউ, স্যামসাং টিভি মনিটর, লজিটেক হেড ফোন, সাউন্ড বক্স, ফ্যান, একটি ফোন এবং পিসির হেডফোন চুরি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালায় বশেমুরবিপ্রবির সকল শিক্ষার্থীর আবাসন নিশ্চিতের বিষয়টি থাকলেও বাস্তবে তা নেই। ফলে আমাদের ক্যাম্পাসের বাইরে নিরাপত্তাহীন পরিবেশে অনেক বেশি ভাড়া দিয়ে থাকতে হচ্ছে এবং এ ধরণের ঘটনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
এই শিক্ষার্থী বলেন, আমরা চাই বাড়িওয়ালারা আরো দায়িত্বশীল হোক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চুরির ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। অনিরাপদ মেস পরিচালনার জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ে আমাদের সহায়তা করুক এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও দ্রুত আবাসন সংকট কাটিয়ে ওঠার পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
চুরির ঘটনা উল্লেখ করে ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান আহাদ বলেন, আমার মেস ভার্সিটি সংলগ্ন গোবরা এলাকায়, গত ১৮ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এসব জিনিস বাসায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি, আর সাধারণ ছুটি এত দীর্ঘদিন স্থায়ী হবে সেটিও কল্পনাতিত ছিল। পরবর্তীতে ৪ জুন জানতে পারি আমার রুমে চুরি হয়েছে। আমার রুম থেকে একটি ডেক্সটপ কম্পিউটার, একটি মোবাইল ফোন, একটি ফ্যান ও সাউন্ড সিস্টেম চুরি হয়।
বাড়ির মালিকের দায়িত্বহীনতার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে আমাদের এ চুরির বিষয়ে মালিক কর্তৃপক্ষ কোন কিছুই জানায়নি। চুরির প্রায় ৪/৫ দিন পর বাড়ির কেয়ারটেকারের কাছ থেকে চুরির ঘটনা জানতে পারি। চুরির সময়ে কেয়ারটেকার বাড়িতে ছিলেন না এবং বাড়িটি অরক্ষিত ছিলো। আমার মনে হয় বাড়ির মালিকদের দ্বায়িত্বহীনতা এবং অসতর্কতার কারণেও প্রতিনিয়ত এমন ঘটনাগুলো ঘটছে।
এ ব্যাপারে গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, কেউ মামলা করলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিব। এছাড়া প্রত্যেকের নিজের মালামাল রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হবে। কারণ ছাত্রাবাসগুলো বিভিন্ন অলি গলিতে অবস্থিত, স্বল্পসংখ্যক পুলিশ দিয়ে সকল ছাত্রাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।