নমুনার অভাবে করোনা পরীক্ষা বন্ধ হচ্ছে যবিপ্রবি ল্যাবে!
দেশে মেডিকেল ছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম করোনা শনাক্তকরণ শুরু করতে সক্ষম হয়েছিল যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)। এখন পর্যাপ্ত নমুনা না পেয়ে বন্ধ হওয়ার উপক্রম বিশ্ববিদ্যালয়টির জিনোম সেন্টারের করোনা শনাক্তকরণ কার্যক্রম। যদিও দেশে নমুনা সংগ্রহ এবং পজেটিভের সংখ্যা দুটি দিনদিন বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে সব সুবিধা যুক্ত থাকার পরও নমুনা পাচ্ছে না ল্যাবটি। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠাচ্ছেন না— অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, যবিপ্রবি সরাসরি নমুনা সংগ্রহ করে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো নমুনাই এর জিনোম সেন্টারে পরীক্ষা করা হয়। এ পরীক্ষাগারে ৯৬টি নমুনা একবারে পিসিআর মেশিনে দেয়ার সুযোগ রয়েছে। অথচ গত ১৪ মে থেকে এ পরীক্ষাগারে ৩৩টির বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়নি বলে জানায় যবিপ্রবি জিনোম সেন্টার। নমুনা পাঠানো হচ্ছে না বলেই এ ল্যাবে পরীক্ষাও কমে গেছে।
এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে শিগগিরই কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে হবে জানিয়েছেন যবিপ্রবি অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদ। তিনি বলেন, ১৮, ২৫, ২২টা করে নমুনা পেলে ল্যাব চালানো দুরূহ। কারণ ৯৬টি নমুনা পরীক্ষার জন্যও যে সময় ও শ্রম ব্যয় হয়, কম সংখ্যক নমুনার ক্ষেত্রেও তাই হয়। কম নমুনা পরীক্ষা করে ওই প্লেট দ্বিতীয়বার পরীক্ষার কাজে ব্যবহারের সুযোগও নেই। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পর্যাপ্ত নমুনা পাঠানো না হলে শিগগিরই কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সারাদেশে এখন ৫০টি ল্যাবে (পরীক্ষাগার) করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এইগুলোতে শনিবার (৬ জুন) পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৮৫১টি নমুনা। এর মধ্যে মোট করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৬৩ হাজার ২৬ জনের। তাদের থেকে মারা গেছেন ৮৪৬ জন। আর ১৩ হাজার ৩২৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
এদিকে যবিপ্রবি ল্যাবে করোনা শনাক্তকরণে পজেটিভ আসার হার বেশি বলে জানিয়েছেন যশোরের জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন। তিনি বলেন, যবিপ্রবি ল্যাবে অনেক বেশি পজেটিভ রেজাল্ট আসছে। সেই তুলনায় খুলনা ল্যাবে পজেটিভ রেজাল্ট আসার হার অনেক কম। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, তাদের কোনো অভিযোগ থাকলে ডিজি অফিসে (স্বাস্থ্য) জানাবে। আমার একাধিক অপশন আছে। আমি যেকোনো ল্যাবে নমুনা পাঠাতে পারি।
তবে নিজেদের ল্যাবে করোনা পরীক্ষা নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের নমুনা পরীক্ষার ফল নিয়ে আমি যথেষ্ট কনফিডেন্ট। এখন পর্যন্ত পুরোপুরি স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে আমরা নমুনা পরীক্ষার কাজ করছি। এজন্য আমরা কোনো টাকা পাই না।
উপাচার্য আরও বলেন, নমুনা পরীক্ষা আমাদের কাজ না। আমরা গবেষণা করি, শিক্ষার্থীদের পড়াই, নিজেরা জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করি। জাতীয় স্বার্থে করোনার নমুনা পরীক্ষার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে হাত দিয়েছিলাম।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগ সহযোগিতা না করলে নমুনা পরীক্ষা বন্ধ করে দিতে হবে, যোগ করলেন তিনি।