আইনেই আছে আবাসন সুবিধা, মেস ভাড়া নিয়ে বিপাকে শিক্ষার্থীরা
‘দারিদ্র্যের কারণে উচ্চ মাধ্যমিক থেকেই টিউশনি করিয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ নিজেকে বহন করতে হয়। কিন্তু করোনার কারণে এখন টিউশনি বন্ধ। এদিকে মেস মালিক বার বার ভাড়া প্রদানের জন্য বলছেন। আমি জানিনা কিভাবে এখন ভাড়া প্রদান করবো’।
মেস ভাড়া নিয়ে এভাবেই নিজের সমস্যার কথা তুলে ধরেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সমাজবিজ্ঞান অনুষদের এক শিক্ষার্থী। শুধুমাত্র তিনিই নন, একই সমস্যায় রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।
২০১০ সালে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টির আইনের ৪১ নম্বর ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক ছাত্রের বিশ্ববিদ্যালয় বিধান দ্বারা নির্ধারিত স্থান ও শর্তাধীনে বসবাস করার নিয়ম থাকলেও ১০ বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়টি তা নিশ্চিত করতে পারেনি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির ১২ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র দুই হাজার শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাচ্ছে, যা শতকরা হিসেবে মাত্র ১৬ শতাংশ।
ফলে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীকেই পড়ালেখা চালিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিভিন্ন মেসে বসবাস করতে হচ্ছে। জানা গেছে, প্রায়ই অতিরিক্ত ভাড়া প্রদান করতে গিয়ে আর্থিক সমস্যারও মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদেরকে।
বিশেষ করে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে টিউশনিসহ খণ্ডকালীন চাকরি বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অধিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করোনার সময়টাতে মেস ভাড়া মওকুফের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব ইয়াসীর মেস ভাড়া মওকুফের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করে বলেন, ‘মেসে থাকা ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী গ্রামের দারিদ্র্য পরিবার থেকে উঠে আসে। শহরে এসে টিউশনি বা বিভিন্ন দোকানে সাময়িক কাজ করে নিজের অর্জিত অর্থে ব্যায় নির্বাহ করে। সম্ভব হলে তারা পরিবারকেও সহায়তা করে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের এই অচল অবস্থায় তাঁদের টিউশনি বন্ধ এবং পরিবারের আয়ের উৎসও বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং মেস ভাড়া মওকুফ জরুরি এবং এ বিষয়ে আমরা জেলা প্রশাসকের সহযোগিতা আশা করছি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগ প্রত্যাশা করে কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থী মুকুল আহমেদ রণি বলেন, ‘আবাসন সংকটের কারণে অনেক শিক্ষার্থীই আর্থিক সমস্যা থাকলেও মেসে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। এসকল শিক্ষার্থীর জন্য এই সময়টায় ভাড়া প্রদান করা অত্যন্ত কঠিন। ইতোমধ্যে আমরা যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখেছি। আমরা আশা করি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শাহজাহানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সমস্যার বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তা করছি এবং আমাদের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব সমাধানের চেষ্টা করবো।’