০৩ মে ২০২০, ০০:০০

মেস ভাড়া নিয়ে বিপাকে হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা, ভাড়াটিয়াকে যে অনুরোধ প্রশাসনের

নভেল করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশেও এই ভাইরাসের প্রভাবে অঘোষিত লকডাউন রয়েছে। এ অবস্থায় মেস ও বাসাভাড়া নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা।

উত্তর বঙ্গের শ্রেষ্ঠ এই বিদ্যাপীঠটিতে এগারো হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। যাদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা। এসব পরিবার থেকে উঠে আসা অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পড়াশোনার ব্যয় টিউশনি ও পার্টটাইমের জবের মাধ্যমে নির্বাহ হয়। দেশের এই অঘোষিত লকডাউনে টিউশনিতে যেতে না পারায় সেই আয় এবং রোজগারের পথটিও বন্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের পরিবারও অর্থের যোগান দিতে পারছে না।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পর্যাপ্ত আবাসন সুবিধা না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী ভাড়া থাকেন শহর এবং ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকার মেসে। কেউ কেউ বাসা বাড়ির রুম ভাড়া নিয়েও থাকেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি থাকায় বর্তমানে নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করছেন শিক্ষার্থীরা ।

এই পরিস্থিতিতেও শিক্ষার্থীদের মেস বা বাসার মালিক ফোন করে ও খুদে বার্তা পাঠিয়ে ভাড়া পরিশোধের কথা বলছেন। যা অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে যে শিক্ষার্থীদের পারিবারিকভাবে অস্বচ্ছল কিংবা নিজেরা টিউশনি করে খরচ জোগাড় করতো সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের। তাই অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে মেস এবং বাসা ভাড়া মওকুফের দাবি জানিয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করে আসছিলো ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এমন দাবির প্রেক্ষিতে মেস মালিক সমিতির কাছে সাধারণ ছুটিকালীন সময়ে মেস ভাড়া মওকুফ এবং পরিশোধ এর সময়সীমা বৃদ্ধির অনুরোধ জানিয়ে সম্প্রতি মেস মালিক সমিতির সভাপতি বরাবর একটি চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমরান পারভেজ।

চিঠিতে বলা হয়, মেসে অবস্থানকারী অনেক ছাত্র-ছাত্রী অসচ্ছল ও দরিদ্র পরিবার থেকে পড়তে এসেছে। আবার অনেক শিক্ষাথীরা টিউশনি করে নিজ খরচ যোগাড় করে থাকে যা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও অনেকের পরিবার বিভিন্ন রকম উৎস থেকে আয় করে থাকেন, যা এখন বন্ধ রয়েছে।

তাই অনেকের পক্ষে মেস ভাড়া প্রদান করা কঠিন হয়ে পড়েছে, এমনকি সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেস ভাড়া মওকুকের দাবি তুলেছে। এ ব্যাপারটি তারা যেমন আপনাদেরকে অবগত করেছে, তেমনি আমাদেরকেও অবগত করেছে।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. ইমরান পারভেজ বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা কেউ আমাদের সন্তান তুল্য, একটি পরিবারের মতো। পরিবারের সমস্যা যেমন আমরা সবাই মিলে সহযোগিতার মাধ্যমে সমাধান করি, তেমনি করোনা সৃষ্ট প্রার্দুভাবের ফলে ছাত্র-ছাত্রী এবং মেস মালিকগণ উভয় পক্ষকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যাটি মোকাবিলার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।  

তানভীর আহমেদ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, এই পরিস্থিতিতে অনেকের পরিবারের পক্ষে মেসের ভাড়া দেওয়া কঠিন। যারা টিউশনি করে চলতো এখন তাঁদের বাড়িতে বসে থাকতে হচ্ছে। কীভাবে তাঁরা মেস ভাড়া দিবে সেটাও ভাবার বিষয়। সবাইকে পরস্পরের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে না হয় এই দুর্যোগ কেটে উঠা কষ্টকর হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, মানবিক কারণে শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়ার বিষয়ে ছাড় দেয়া উচিৎ। এই ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমি মনে করি।