বাবা হারা মা বললেন— ‘আজ আমার আব্বুর জন্মদিন’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদের জন্মদিন আজ। ছাত্র শিবিরের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহ করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে নিশ্চিত করা হয়েছে যে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ভোঁতা জিনিসের মাধ্যমে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
১৯৯৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন আবরার। সে হিসেবে আজ তার ২২তম জন্মদিন। ছেলের রোকেয়া খাতুন বলেলেন, ‘আজ আমার আব্বুর (আবরার) জন্মদিন। ১৯৯৮ সালে যেদিন ওর জন্ম হলো, সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। বাংলা সনে মাঘ মাস। এক সপ্তাহ ধরে শীতের কুয়াশায় মোড়ানো ছিল চারপাশ। আর আবরার ফাইয়াজ যেদিন জন্ম নেয়, সেদিন সূর্যটা শহরে আলো ছড়িয়েছিল।’
বিষন্ন আবরারের মা রোকেয়া খাতুন জানান, বড় ছেলে আবরার ফাহাদ যখন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল, তখন নিম্ন-মধ্যবিত্ত এ পরিবারে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু গত বছরের ৬ অক্টোবর রাতে সব আশা-আকাঙ্ক্ষা শেষ হয়ে গেছে।
জন্মদিনে পারিবারিকভাবে আজ তেমন কোনো কর্মসূচি না থাকলেও বাদ আসর কুষ্টিয়া শহরের বাড়ির পাশের আল হেরা জামে মসজিদে নিহত আবরার ফাহাদের জন্য দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
নিজের জন্মের সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই বাবাকে হারিয়েছিলেন রোকেয়া খাতুন। তাই ছেলের জন্মের পর থেকেই আব্বু বলে ডাকতেন। আবরার ফাহাদ নামটা স্বামী বরকত উল্লাহর দেয়া। জন্মের পর মাত্র একবার ঘটা করে বাড়িতে আবরারের জন্মদিন পালন করা হয়েছিল। পাঁচ বছর বয়সে, যে বছর আবরারকে স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল, সেই বছর। এখনও মা যত্ন করে রেখেছেন পুরোনো ছবির অ্যালবাম।
জন্মদিনের সকালে ছেলেকে ফোন করে ভালো কিছু খেয়ে নিতে বলতেন রোকেয়া খাতুন। এবার কাউকে কিছু বলার নেই। পাশেই বসে ছিলেন ছোট ছেলে আবরার ফাইয়াজ।
এর আগে ভাইয়ের জন্মদিন নিয়ে ফেসবুকে আবেগপূর্ণ স্ট্যাটাস দেন ভাই আবরার ফাইয়াজ। স্ট্যাটাসে লেখেন ‘‘১২ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৮। রাত ৯টার কাছাকাছি। কুষ্টিয়ার একটা হাসপাতালে জন্ম হয় ‘আবরার ফাহাদ রাব্বি’র। আজকে তাঁর ২২ বছর পূর্ণ হত; কিন্তু তা তো আর হলো না।
শুনেছি ছোটবেলায় জন্মদিন করা হতো আমাদের। কিন্তু বড় হওয়ার পর কখনো হয়নি। ভাইয়া এগুলো পছন্দ করতো না। তাই সাধারনত বাড়ির ভেতরেই আমরা ৩ জন মিলে কিছু করতাম। কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সেটা শুধুই তারিখে পরিণত হয়। আমাদের ভেতরে ভালো মিল থাকলেও কখনো লজ্জায় ভাইয়াকে জন্মদিনের উইশও করা হয়নি। ও নিজেও করতে পছন্দ করতো না। কখনো করলেও খুশি হতো কিন্তু লজ্জায় তা প্রকাশ না করে একটা সিরিয়াস ভাব নিতো। মাঝে মাঝে হয়তো আম্মু কেক কিনে আনতো; সেটাই দুইজন কাটতাম। আর আম্মু রান্না করতো কিছু।
আজ ৪ মাস হয়ে গেল ও আর নেই আমাদের মাঝে। বেঁচে থাকলে হয়তো আজকেও কিছু হতো না। হয়তো শুধু বন্ধুদের ট্রিট দিত। একসাথে কেক কাটতো। কিন্তু সময় থাকতে তো আমরা মূল্য বুঝিনা। তাই এখন এই তারিখগুলায় তোর অস্তিত্বের সাথে জড়িয়ে গেছে।
শুধু একটা কথায় বলবো- যেখানে থাকিস ভালো থাকিস ভাইয়া। কখনো তো জন্মদিনে কিছু করতে পারলাম না।’’