নোবিপ্রবির সাবেক উপাচার্যের দুর্নীতি তদন্ত সীমাবদ্ধ বিজ্ঞপ্তিতেই
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ-পদোন্নতি, তার অনুসারী ছাত্রদের হল দখলের সুযোগ করে দেওয়াসহ নানা বিষয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
তার পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করার জন্য অফিস আদেশ জারি করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ( ইউজিসি)। ইউজিসির এ আদেশ জারির পর চার মাস পেরিয়ে গেলেও তা সীমাবদ্ধ রয়ে গেল এক বিজ্ঞাপ্তিতেই।
জানা যায়, গত ২৪ জুলাই ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মো. কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এম অহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গত ২২ মে৩৭.০০.০০০.০৮.০৮.০১২.১৮-১৯২ স্মারকের মাধ্যমে উথাপিত অভিযোগের বিষয়টি তদন্তপূর্বক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
সে মোতাবেক ইউজিসির দুই সদস্য প্রফেসর ড. এম শাহ্ নওয়াজ আলি, প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপপরিচালক মৌলি আজাদকে নিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
একই আদেশে কমিটির টার্মস অব রেফারেন্সে বলা হয়, ‘কমিটি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এম অহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে উথাপিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করবে। তদন্ত কাজ যথাশিগগিরই সম্পন্ন করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেশ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’ কিন্তু সাবেক উপাচার্য ড. এম অহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে এখনো দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত হয়নি।
কী কারণে তদন্তে বিলন্ব হচ্ছে জানতে চাইলে নোবিপ্রবির বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. দিদার-উল-আলম বলেন, ‘আমি যতটুকু জেনেছি যারা তদন্ত কমিটিতে আছেন তারা ব্যস্ততার মধ্যে রয়েছেন। এ মাসে (ডিসেন্বর) তদন্ত কমিটি আসবে বলে জেনেছি। এর বেশি কিছু আমার জানা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের একাধিক সূত্র জানায়, সাবেক উপাচার্য ড. এম অহিদুজ্জামান তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়টি যেন তদন্ত না হয় সেজন্য তিনি ইউজিসিতে নানাভাবে প্রভাব খাটিয়ে ও তদবির চালিয়ে তদন্ত কাজ বন্ধ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে তদন্তে বিলন্ব হচ্ছে।
ড. এম অহিদুজ্জামান ২০১৫ সালের ২ জুন নোবিপ্রবির উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন। উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০১ ও ১১ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে প্রকাশিত ইউজিসি প্রজ্ঞাপনকে আমলে না নিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার পরও শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হতে অস্বীকৃতি জানালে লিখিত পরীক্ষায় ফেল করানোসহ প্ল্যানিং কমিটি গঠন ও শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে সাবেক এই উপাচার্যের বিরুদ্ধে।
এছাড়া গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে উপাচার্য এম অহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, প্ল্যানিং কমিটি গঠন ও শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে অনিয়ম, আর্থিক অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার তথ্যপ্রমাণসহ অভিযোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, তদন্ত কমিটি যদি উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে লিখিত বক্তব্য দিতে বলে, তবে অনেকেই দেবেন। কিন্তু প্রকাশ্যে তদন্ত কমিটির সামনে এসে কেউই কথা বলবেন না। কারণ, অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার শিক্ষকেরা অনেকটা জিম্মি অবস্থায় রয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে ইউজিসির তদন্ত কমিটির সদস্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপপরিচালক মৌলি আজাদকে ফোন দেয়া হলেও তিনি কোন তথ্য দিতে রাজি হননি।