‘ভাই তুই থাক আমি আবার একটু পর আসছি’
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যাকাণ্ডে চার্জশিটভুক্ত আসামিদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া ৬ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। আবরার হত্যাকান্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বুয়েট বোর্ড অব রেসিডেন্স এন্ড ডিসিপ্লিন এ সিদ্ধান্ত নেয়।
এদিকে আবরার হত্যার বিচার নিয়ে দাদা আবদুল গফুরের সংশয়ের কথা জানিয়েছেন আবরার ফাইয়াজ। শুক্রবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘‘দুই মাস আগে যে দাদা বলেছিল আমি আরো ২০বছর বাঁচব। আমার রাব্বি ভাইকে চাকরি করতে না দেখে মরবো না। দুইমাস পর এখন একটা কথাই জিজ্ঞেস করে, আমার রাব্বি ভাইকে যারা মেরে ফেলল ওদের বিচার দেখে মরতে পারবো তো?
প্রত্যেক দিন সকালে কবর থেকে ফেরার আগে বলে, ‘ভাই তুই একটু থাক আমি আবার একটু পর আসছি।’
জীবন বড়ই বিচিত্র।’’
বাকি দু’দাবি আদায়ের অপেক্ষায় সহপাঠীরা: এদিকে আবরার হত্যাকারীদের বহিষ্কার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তে স্বস্তি প্রকাশ করলেও বাকি দুটি দাবি বাস্তবায়নে প্রশাসনের নেয়া শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন শিক্ষার্থীরা। আবরার হত্যাকাণ্ডের পর তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের শর্তে মাঠের আন্দোলন প্রত্যাহার করেছিল তারা। গত ১৩ নভেম্বর পুলিশ মামলার চার্জশিট জমা দিলে শিক্ষাথীদের তিন দফা দাবি পূরণে তিন সপ্তাহ সময় নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর এক সপ্তাহ পরই ২৬ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করল বুয়েঠ।
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির মধ্যে ছিল আবরার হত্যায় অভিযুক্তদের বুয়েট থেকে আজীবন বহিষ্কার, হলগুলোতে ইতোপূর্বে র্যাগিংয়ে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা ও অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তির বিধান স্পষ্ট করা।
এ বিষয়ে বুয়েটের একজন শিক্ষার্থী জানান, আমাদের তিন দফার মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র এক দফা পূরন হয়েছে। র্যাগে অভিযুক্তদের শাস্তি এখনো নিশ্চিত হয়নি। এছাড়া আমরা বলেছিলাম অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তির বিধান স্পষ্ট করার। তিনি বলেন, আবরার হত্যায় অভিযুক্তদের বুয়েট থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে তাতে আমরা স্বস্তিবোধ করছি।
বুয়েটের ১৭তম ব্যাচের অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা আশা করছি বুয়েট প্রশাসন বুয়েটের নিরাপত্তা ও সার্বিক বিবেচনায় আমাদের দাবিগুলো পূরণ করবেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন থেকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কাছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জিম্মি হয়ে পড়েছিল। বিভিন্ন সময়ে তারা প্রশাসনের কাছে অপরাধগুলোর অভিযোগ জানিয়ে আসলেও কোনো প্রতিকার পায়নি। আমরা আশা করব দ্রুত সময়ে বুয়েটের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে। তাতে করে আমরা একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরে যাব ।
১৬তম ব্যাচের আহসান উল্লাহ হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, এরই মধ্যে আমরা এক মাস পিছিয়ে গেছি। এক মাস আগে আমাদের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করার কথা থাকলেও আবরার হত্যার ঘটনায় আন্দোলনরতদের তিন দফা দাবি পূরণ না হওয়ায় প্রশাসন পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করতে পারেনি। আমরা আশা করছি অভিযুক্তদের যেমন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে পাশাপাশি র্যাগে জড়িতদের শাস্তির আওতায় এনে বুয়েটের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে এবং আমরা একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরে যাব।
আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডে অপর আসামিদের সম্পৃক্ততা উঠে আসে।