প্রতিষ্ঠার দুই বছরে বশেফমুবিপ্রবি
শিক্ষা আলোকবর্তিকা স্বরূপ। শিক্ষা উন্নয়নরে সোপান। শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষিত কোন জাতি অনুন্নত বা পশ্চাৎপদ থেকেছে এমন নজির কোথাও নেই। শিক্ষা বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা একজন শিক্ষার্থীর নিজেকে, তার পরিবেশ-প্রতিবেশ, মানুষ, সমাজ, সংস্কৃতি, ভাষা, সাহিত্য, কৃষ্টি, শিল্পকলা, দেশ, ইতহিাস-ঐতিহ্য, মানুষের জীবন সংগ্রাম, মানব সভ্যতা ইত্যাদি সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেয়।
শিক্ষা একজন মানুষকে সচেতন, সংবেদনশীল, নৈতিক, সৃষ্টিশীল, আত্মপ্রত্যয়ী ও মানবিক গুণে গুণান্বিত করে তোলে। তবে এর জন্য থাকা চাই সুশিক্ষা বা সত্যিকারের শিক্ষা। আর সুশিক্ষার মূলে থাকে দেশ, মানুষ ও মানবকল্যাণ।
এই ক্ষেত্রে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেফমুবিপ্রবি) উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। পাকিস্তানী শাসন আমলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালীর জাতীয় মুক্তির সংগ্রামের মূল লক্ষ্য ছিল বাঙালীদের জন্য একটি গণতান্ত্রিক, মানবকল্যাণকামী, অসাম্প্রদায়কি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। শাসকগোষ্ঠীর ঔপনিবেশিক ধাঁচের প্রতিক্রিয়াশীল শিক্ষানীতি বিরোধী বাংলার ছাত্র-সমাজের শিক্ষা আন্দোলন জাতীয় মুক্তির বৃহত্তর আন্দোলনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই আন্দোলনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত হয় বাংলার আপামর জনতা। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে। বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নই দেখেননি , তিনি একটি উন্নত-সমৃদ্ধ সুখী বাংলাদশে, তাঁর কথায়, ‘সোনার বাংলার’ স্বপ্নও দেখেছিলেন । তিনি বলতেন, ‘সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই।’ অর্থাৎ দক্ষ, যোগ্য, অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমিক, আধুনিক, শিক্ষিত সন্তান বা মানবসম্পদ। আর তা সৃষ্টির জন্য থাকা চাই সত্যিকার মানুষ গড়ার শিক্ষা বা সুশিক্ষা।
অর্থাৎ দক্ষ, যোগ্য, অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমিক, আধুনিক, শিক্ষিত সন্তান বা মানবসম্পদ। আর তা সৃষ্টির জন্য থাকা চাই সত্যিকার মানুষ গড়ার শিক্ষা বা সুশিক্ষা। সেই সুশিক্ষা দিতেই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেফমুবিপ্রবি)।
বঙ্গবন্ধু সরকার কর্তৃক স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। ৭২-এর সংবিধানে 'রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি' অংশে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনা অন্তর্ভুক্ত করে ঐ সংবিধানপ্রণীত হয়। এতে বলা হয়, (ক) একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য, (খ) সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সংগতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছা প্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য, (গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।’
বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনাই শেখ হাসিনা সরকারের শিক্ষানীতি ও আদর্শ। একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, তাঁর সরকারের আমলে বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে নীরব বিপ্লব সাধিত হয়েছে।
২০১৭ সালে ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন’ পাস হওয়ার পর এ বিদ্যাপীঠ সীমিত সম্পদের মধ্যেই অদম্য শক্তি এবং আত্মবিশ্বাসী কর্মীদের নিয়ে এগিয়ে চলছে। জামালপুরের মেলান্দহে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে এখন শিক্ষাকার্যক্রম চলছে জেলা সদরের দেওয়ানপাড়ায়, বঙ্গবন্ধু আইডিয়াল স্কুলের একটি ভবনে।
এরই মাঝে প্রথম ব্যাচে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম ব্যাচে চারটি বিভাগে ১৩৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। শিক্ষাকার্যক্রমের পাশাপাশি তাদের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে যা যা করণীয় সবই করা হচ্ছে। ছোট আকারে হলেও দেশি-বিদেশি লেখক ও গবেষকদের বইয়ের সমাহার রয়েছে লাইব্রেরিতে স্থাপন করা হয়েছে অত্যাধুনিক ল্যাব। এতে ফ্রি ইন্টারনেট সেবাসহ প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণও সংগ্রহ করতে পারছেন শিক্ষার্থীরা।
শূন্যে থাকা একটি প্রতিষ্ঠানকে এই পর্যায়ে নেওয়ার কারিগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ। তিনি একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ শিক্ষা প্রশাসক হিসেবে বেশ সুনামের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করেন প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর বর্তমান প্রাগ্রসর বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা ও সমতা অর্জন এবং জাতীয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা ও আধুনকি জ্ঞানচর্চা, বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যথাযথ গুরুত্ব প্রদানসহ পঠন-পাঠন ও গবেষণার সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি ও সম্প্রসারণকল্পে জামালপুরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
প্রথম ব্যাচে অর্থাৎ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে চারটি অনুষদে চারটি বিভাগের শিক্ষাকার্যক্রম চলছে। বিভাগগুলো হচ্ছে- কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, গণিত, ব্যবস্থাপনা ও সমাজকর্ম। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে প্রকৌশল অনুষদের অধীনে নতুন বিভাগ ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং চালু করা হয়েছে। ফিশারিজ অনুষদ হিসেবে আত্তীকরণের প্রক্রিয়াধীন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফিশারিজ কলেজের সকল সম্পত্তি রেজিস্ট্রিকৃত দলিলমূলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে হস্তান্তর করা হয়েছে।
২৯ নভেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর মডেল সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা নগর, কেন্দ্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
তথ্য-প্রযুক্তিরি সর্বোচ্চ ব্যবহারে বিশ্ববিদ্যালয়টি ধারণ করবে এক আধুনকি রূপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে বাস্তবায়নে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় সাধনকল্পে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মানের দিক দিয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাঙ্গনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
লেখক: বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা।