মধ্যরাতে কোলকাতায় পুলিশি ডাকাতির শিকার বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক: স্ট্যাটাস ভাইরাল
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:৩০ AM , আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:৩০ AM
বৈধ পাসপোর্ট এবং ভিসা নিয়ে কোলকাতা ভ্রমণে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্যাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষক সোলাইমান হোসাইন। কিন্তু দেশে ফেরার পথে অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতা হয় তার। যাকে পুলিশি ডাকাতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন ওই শিক্ষক।
এ নিয়ে ফেসবুকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবর একটি খোলা চিঠি লিখেছেন বশেমুরবিপ্রবির ওই শিক্ষক।
পাঠকদের উদ্দেশ্যে ফেসবুক খোলা চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
বরাবর,
মমতা দিদি,
পশ্চিমবঙ্গ, ইন্ডিয়া।
বিষয়: বাঙ্গালীদের_কাছ_থেকে_ঈশ্বরতুল্য_ইন্ডিয়ান_পুলিশের_প্রকাশ্যে_ছিনতাই_প্রসঙ্গে।
প্রিয় দিদি,
আপনার কাছে অতি বিনয়ের সঙ্গে বলছি যে,
বৈধ পাসপোর্ট করে, বৈধ উপায়ে ভিসা পেয়ে ২য় বারের মতো ইন্ডিয়াতে এসেছি ১৪-১১-২০১৯ তারিখে। ৩ দিন কলকাতা থাকার পর আজ ১৭-১১-২০১৯ ভোর ৩ টায় মার্কুইস স্ট্রিট থেকে শিয়ালদাহ রেল স্টেশনের দিকে রওনা দিলাম ট্যাক্সিতে। মাঝপথ পেরিয়ে শিয়ালদাহ স্টেশনের ঠিক আগে সিগনালে দাড়িয়ে থাকা (পূর্ব পরিকল্পিতভাবে) এক ইন্ডিয়ান পুলিশের হাতের ইশারাতে ট্যাক্সি ড্রাইভার ট্যাক্সি থামিয়ে দিল। পুলিশ কাছে আসতেই ড্রাইভার বলে উনাকে পাসপোর্ট দাও। ৪ জনের সবাই পাসপোর্ট দেখালাম। বেশ ভাব নিয়ে সবার পরিচয়সহ সকল ইতিহাস শুনলো। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব বিনয়ের সাথে আমার ক্লিয়ার পরিচয় দিলাম। তারপরে ইন্ডিয়া থেকে ক্রয়কৃত কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য (জুতা, চাদর, কসমেটিকস ইত্যাদি) দেখে বিলের রশিদ দেখাতে বললে আমরা রীতিমত দেখালাম সবকিছু। সবকিছু দেখানোর পর, সকল বৈধ পথ অনুসরণ করে ক্রয় করার রশিদ দেখানো সত্ত্বেও ঐ ইন্ডিয়ান পুলিশবাবু আমাদেরকে বলে আমরা নাকি ভ্যাট না দিয়ে পণ্য ক্রয় করেছি। তাই পণ্যগুলি নামিয়ে নিবে নতুবা আমাদেরকে থানায় যেতে হবে। ড্রাইভারকে বলে “গাড়ি ঘুরিয়ে থানাতে চল”। বলতে বলতে গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে বসে পড়তে প্রস্তুত। ঠিক এই মুহূর্তে উনার কাছে (পূর্বপরিকল্পিত) একটা রিং আসলো। রিসিভ করে “স্যার ঠিক আছে স্যার। আমি দেখছি ব্যাপারটা” এইটা শুনালো আমাদের। সঙ্গে সঙ্গেই বলে, “ঐ যে আমার স্যার দাঁড়ানো, স্যার বলেছে আইন অনুযায়ী ৮,৪০০ রুপিয়া জরিমানা হয়েছে”। জরিমানা দিয়ে চলে যান”। যেহেতু আমরা সকল বৈধতা অনুসরণ করেছি, তাই জরিমানা দিতে একটু আপত্তি জানালাম। এজন্য ঐ পুলিশ আমাদেরকে বেশ হুমকি ধামকি দিয়ে সামনে এগিয়ে গেল। এভাবে কয়েকমিনিট পেরিয়ে যাওয়ার পর ড্রাইভার নেমে গিয়ে এদিক ওদিক থেকে ঘুরে এসে বলে, “দিয়ে দে টাকা। না হলে দেশে ফিরতে সমস্যা হবে। ’
তখন পেছন থেকে সেই কাঙ্ক্ষিত স্যার হাজির। আসতেই ড্রাইভার বলে “স্যারের সঙ্গে মিটিয়ে ফেল। সমস্যা করিসনা।’ রীতিমত ডাকাতি। যেহেতু ইন্ডিয়া আমার ততবেশি জানাশুনা না এবং দেশে আসার জন্য খুব ব্যস্ততা, তাই থানাতে যাওয়ার হালকা ইচ্ছা হলেও দ্রুত দেশে ফেরার জন্য বাধ্য হয়ে গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে উনাকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম। বার বার বললাম, “দাদা আমরা সকল বৈধ পথ অনুসরণ করেছি, আমরা আপনাদের অতিথি। তাছাড়া আমি একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।” এমনকি আরো বললাম যে, ” যেহেতু আমরা বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে ফিরে এবং নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী ক্রয় করে দেশে ফিরে যাচ্ছি তাই এখন আমাদের কাছে রুপি আর তেমন বেশি নাই”। কিন্তু না, বুঝেনি আমার কথাতে। অবশেষে ঐ পুলিশনামী ও ড্রাইভার মিলে রীতিমত ডাকাতি করেই ছাড়লো আমাদের কাছ থেকে। তারপরে আমরা গাড়িতে বসলাম। ড্রাইভার আমাদের চোখের সামনে থেকে ডাকাতির একটি অংশ ভাগ করে নিয়ে এসে গাড়ি ছাড়লো। ছাড়তে ছাড়তে লক্ষ্য করলাম আরেকটি ট্যাক্সি দাঁড়ালো ঐ একইভাবে। তার ১.৫ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম শিয়ালদাহ স্টেশনে। নেমে ড্রাইভারকে বললাম, কতটাকা কামালে আমাদের কাছ থেকে? উনি উত্তর দিতে দিতে ভাড়াটা নিয়েই গাড়ি চালিয়ে খুব দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের পেছনের সেই ট্যাক্সিটা এসে পৌছালো। জিজ্ঞাসা করলাম “ভাই কতো নিলো আপনাদের কাছ থেকে? লোকটা খুব কান্না সুরে বললো “আপনাদের থেকেও নিছে ভাই? বললাম হ্যাঁ ভাই। তখন উনি বললেন, “ভাই আমার কাছে ৫,০০০ টাকার মতো ছিল। সবটাই নিয়ে নিছে। বাকিটা ইতিহাস।
অতএব, আপনার নিকট বিনীত আবেদন, আপনাদের দেশে ভ্রমণ বা চিকিৎসার জন্য যাওয়া বাঙ্গালীদের সঙ্গে শেষ রাত্রে রাস্তার মাঝে এমন ডাকাতসুলভ আচরণের জন্য সিগনালে থাকা সিসি ক্যামেরা দেখে এবং ঐ সময়ের ডিউটি লিস্ট মিলিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচার করুন। নতুবা পশ্চিমবঙ্গের প্রতি আমাদের দেশের মানুষের মনটা ভেঙ্গে যাচ্ছে।