শিক্ষার্থীদের ১৭ দাবির আন্দোলনে ফের অচলাবস্থা বশেমুরবিপ্রবিতে
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) এবার ১৭ দফা দাবিতে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে দ্বিতীয় দিনের মতো এ কর্মসূচি পালন করছেন।
আজ বুধবার সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে মিছিল নিয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের দায়িত্ব পালন করার সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাত্রারিক্ত হল ভাড়া, ক্রেডিট ফি, চিকিৎসা ফি আদায় করেছে এবং সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। এসব মাত্রারিক্ত ফি’র বিরুদ্ধে ও নানা অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবিতে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন।
১৭ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হল- ক্রেডিটহ ফিস ১০০ টাকা থেকে ৫০ টাকা করতে হবে, হল ভাড়া রুমে ১৫০ টাকা ও গণরুমের ভাড়া প্রতি সিট প্রতি ২৫ টাকা করতে হবে, ক্লাস উপস্থিতি হার ৫০ শতাংশ করতে হবে এবং কোন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ৫০ শতাংশের কম হলে তাকে জরিমানা সাপেক্ষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে, কেন্দ্র ফি ১০০ টাকা থেকে ৫০ টাকা করতে হবে, পরিবহন ফি ৬০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা করতে হবে, পরীক্ষায় ইমপ্রুভমেন্ট সিস্টেম চালু করতে হবে, বিভাগীয় উন্নয়ন ফি বাতিল করতে হবে, চিকিৎসা ফি ২২৫ টাকা থেকে ১০০ টাকা করতে হবে।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলরত শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ-আল-রাজু দৈনিক অধিকারকে জানান, ‘শিক্ষা কোন পণ্য নয় যে টাকা দিয়ে কিনতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় আসে দেশের সকল মানুষের কর থেকে। আমরা শোষণের শিকল ভেঙ্গে স্বৈরচারী খোন্দকার নাসিরউদ্দিনকে তাড়িয়েছি। আর কোন অন্যায়ের সাথে আপোস নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আর কোন অতিরিক্ত ফি দিব না। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাবো।’
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. মোঃ শাহাজাহান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা গতকাল আমাকে তাদের দাবী সমূহ আমাকে লিখিত আকারে দিয়েছে এবং আমরা মনে করি, তাদের অধিকাংশ দাবী সমূহ যৌক্তিক। কিন্তু বেশ কিছু দাবী-দাওয়া আইনানুযায়ী আমার ক্ষমতার বাইরে।’
শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল ক্রেডিট ফি কমানো, হলের ভাড়া কমানো, চিকিৎসা ফি কমানো এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, তাদের এ দাবিসমূহ রিজেন্ট বোর্ডের সভার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। কিন্তু আমি রুটিন দ্বায়িত্বে থাকায় রিজেন্ট বোর্ডের সভা ডাকতে পারছি না। পূর্ণাঙ্গ উপাচার্য নিয়োগের আগ পর্যন্ত এ বিষয়গুলো মিমাংসা করা সম্ভব হচ্ছে না।’
এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা চালিয়ে যেতে আহবান জানান। নতুন উপাচার্য আসলে উক্ত বিষয়গুলো সমাধান করা হবে বলে আশ্বাস দেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি, নারী কেলেঙ্কারি, ভর্তি বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন।