অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়াই বিভাগ বৃদ্ধি, সংকটে বশেমুরবিপ্রবি
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। ক্লাসরুম সংকটের কারণে তাদেরকে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে গ্যারেজে এবং তাবুর নিচে। বিগত সময়ে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন না করেই ক্রমাগত আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান শিক্ষক-শিক্ষর্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গত পাঁচ বছরের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে কোটাসহ বিশ্ববিদ্যালয়টি আসন সংখ্যা ছিলো প্রায় ৪৫০ টি। ২০১৫ সালে খোন্দকার নাসিরউদ্দিন দায়িত্ব গ্রহণের পর কোনো ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন না করেই আসন সংখ্যা করেন ১৫শ’টি। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে আসনসংখ্যা করা হয় ২২শ’টি। ২০১৭-১৮ আসন সংখ্যা বাড়িয়ে করা হয় ৩ হাজার। সর্বশেষ ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতেও আসন সংখ্যা রাখা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার টি।
এই পাঁচ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বিভাগ চালু করা হয়েছে প্রায় ২০ টি, আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে প্রায় ৭ গুণ, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২০০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজারে। কিন্তু অবকাঠামোগত তেমন উন্নয়ন হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচতলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবনটি ২০১১ সালে নির্মিত। ২০১৫ থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা কর্মচারীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলেও ২০১৪ এর পর এখন পর্যন্ত এই ভবনটিকে কোনোরূপ বর্ধিত করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি পাঁচতলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের একটি ২০১৪ এর পূর্বে নির্মিত এবং অপরটির নির্মাণ কাজ ২০১৬ সালে শুরু হলেও এখনো শেষ হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ছাত্র হল এবং দুটি ছাত্রী হলের মধ্যে দুটি ছাত্র হল এবং একটি ছাত্রী হল ২০১৪ সালের পূর্বে নির্মিত এবং নতুন একটি ছাত্র হল ও একটি ছাত্রী হলের কাজ ২০১৫ সালে শুরু হলেও এখনো শেষ হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৪ সালে প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে মাত্র ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১৫ থেকে প্রতিষ্ঠিত নতুন ২০ টি বিভাগের কোনোটিতেই নেই পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, ল্যাবরুম এবং সেমিনার রুমের ব্যবস্থা। বেশিরভাগ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হয় নির্মাণাধীন ভবন এবং টিনশেড ক্লাসরুমে। এমনকি ক্লাসরুম সংকটের জন্য কখনো কখনো গ্যারেজ ও ক্যাফেটেরিয়াতেও ক্লাস করতে হয়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের এমন দূরাবস্থার মধ্যেই প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষার জন্য ক্যাম্পাসে আসছে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। আসন সংখ্যা বেশি হওয়ায় সাধারণত আবেদনকারীর সংখ্যাও বেশি হয়ে থাকে। সর্বশেষ ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা না থাকায় এবং গোপালগঞ্জের পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় এই বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীর সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় প্রশাসনকে। যার ফলস্বরূপ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যারেজে এমনকি মাঠেও তাবু টানিয়ে পরীক্ষার নেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব আশিকুজ্জামান ভুঁইয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, "ভর্তি পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা ক্যাম্পাসে নেয়ার ব্যবস্থা করি।" তিনি বলেন, অপরিকল্পিতভাবে নতুন বিভাগ চালু করাতেই মূলত এই দূরাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জানান, "পূর্বের উপাচার্য নিজের ইচ্ছেমতো একের পর এক বিভাগ চালু করেছেন, আমরা একাডেমিক কাউন্সিলে বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও তিনি এটা করেছেন।"