দাবি পূরণে উদাসীনতা দেখাচ্ছে বুয়েট প্রশাসন, ফের আন্দোলন
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড ঘটনায় মাঠ পর্যায়ের আন্দোলন প্রত্যাহারের ১৩ দিনের মাথায় ফের আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। কার্যকর ফলাফল না দেখা পর্যন্ত আন্দোলনে থাকার ঘোষণা দেন তারা।
মঙ্গলবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা এই ঘোষণা দেন। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাহমুদুর রহমান সায়েম ও অন্তরা তিথি। এসময় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ১০ দাবির মধ্যে মাত্র দুটি দাবি মানা হয়েছে। বাকি দাবিগুলো আদায়ে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চলবে। দাবি গুলোর বিষয়ে ফের বুয়েট ভিসির সঙ্গে বসবেন বলেও জানান তারা।
মাহমুদুর রহমান সায়েম বলেন, দাবি পূরণে বুয়েট প্রশাসনের উদাসীনতা প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। আবরার হত্যা মামলার খরচ বুয়েট প্রশাসন দেওয়ার ঘোষণা দিলেও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
এছাড়া আবরারের পরিবারেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে আজ পর্যন্ত কেউ যোগাযোগ করেনি বলেও জানান তারা। তারা বলেন, আমরা চাই দ্রুত তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তার সব ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল- দায়েরকৃত মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালের মাধ্যমে স্বল্পতম সমেয়র মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য বুয়েট প্রশাসনকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রশাসনকে সক্রিয় থেকে সমস্ত প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এবং তার আপডেট আমাদের সাধারণ ছাত্রদেরকে জানাতে হবে।
আমরা আশা করছি- যেহেতু মামলাটি তদন্তাধীন। যখন এটি বিচারিক প্রক্রিয়ায় যাবে তখন তা দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালকে হস্তান্ত করা হবে। সায়েম বলেন, চার্জশিটের বিষয়টি যেহেতু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বে। সেহেতু আমরা আশা করছি- তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথভাবে তদন্ত করে মামলার চার্জশিট দায়ের করবে।
অন্তরা তিথি বলেন, আমাদের দাবি ছিল বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। যেহেতু বুয়েটে এটা নিষিদ্ধ করেছে কিন্তু যারা এটি অমান্য করবে তাদের কি ধরণের শাস্তি প্রদান করা হবে তা স্পষ্ট করা প্রয়োজন। এ মর্মে একটি নোটিশ দিতে হবে। এছাড়া, এ ধরণের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আর যাতে না ঘটে এবং ঘটলে তার শাস্তি কি হবে সে বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রনয়ণ করে তা বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, এর আগে যেসব হলে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে তাতে জড়িতদের খুজে বের করে তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করা এবং আহসানউল্লাহ হল ও সোহরাওয়ার্দী হলে পূর্বের ঘটনায় জড়িত সকলকে ছাত্রত্ব বাতিল করার দাবি ছিল। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এই ঘটনাগুলোর ব্যাপারে প্রশাসনের কোন তৎপরতা দেখা যায়নি।
অন্তরা তিথি আরও বলেন, শুধুমাত্র ভিসি স্যারের জবাবদিহিতা ও শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট পদত্যাগ ছাড়া অন্যকোন দাবি পুরোপুরি মানা হয়নি। যদিও অন্যান্য দাবিগুলোর ব্যাপারে কাজ চলছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা একাডেমিকভাবে পিছিয়ে পড়ছি। কিন্তু আমরা চাইনা আরেকটা আবরারকে জীবন দিতে হয়। বা আমাদের সঙ্গে এই ব্যাপারগুলো ঘটুক। বৃহত্তর স্বার্থে আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ না নিলেও প্রশাসন তার কার্যক্রম চালাচ্ছে।
গত ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা কওে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের কারণে ১১ অক্টোবর বুয়েট ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। শিক্ষার্থীরা তাদের সব দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান পদক্ষেপ ও দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য কয়েকটি দাবি বাস্তবায়নের শর্তে ১৪ অক্টোবর ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে আন্দোলন শিথিল করে। পরে সব দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে ১৬ অক্টোবর বুয়েট মিলনায়তনে গণশপথের মধ্য দিয়ে মাঠের আন্দোলনে ইতি টানেন শিক্ষার্থীরা। তবে মামলার অভিযোগপত্র পাওয়ার পর অভিযুক্তদের বহিষ্কার না করা পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন তারা।