বুয়েট পরিবারের শপথে অন্যায়, অপশক্তি রুখে দেওয়ার প্রত্যয়
আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার দাবিতে আন্দোলনরত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গণশপথ নিয়েছেন। সেখানে বুয়েট ক্যাম্পাসে সব ধরণের অন্যায় ও অপশক্তিকে রুখে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তারা।
শপথে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের কল্যাণ ও নিরাপত্তার নিমিত্তে আমার উপর অর্পিত ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক, নৈতিক ও মানবিক সকল প্রকার দায়িত্ব সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করব।’
বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের (ডিএসডব্লিউ) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. আব্দুল বাসিত, বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষবৃন্দ এবং শিক্ষার্থীরা শপথ পাঠ করেন। বুয়েটের ১৭তম ব্যাচের ছাত্রী রাফিয়া রিজওয়ানা শপথ পাঠ করান। এসময় বিভিন্ন অনুষদের ডিন এবং অন্যান্য শিক্ষকরাও উপস্থিত ছিলেন। তবে তারা শপথ পাঠে অংশ নেননি।
শপথ পাঠে বলা হয়, ‘এই বিশ্বিবদ্যালয়ের আঙ্গিনায় আমার জ্ঞাতসারে হওয়া প্রত্যেক অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমি সর্বদা সোচ্চার থাকবো। আমি আরও প্রতিজ্ঞা করছি, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থানকে আমরা সম্মিলিতভাবে রুখে দেবো। নৈতিকতার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সব ধরণের বৈষম্যমূলক অপসংস্কৃতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার আমরা সকলে উৎপাটিত করবো।’
তারা শপথ করেন, ‘এই আঙ্গিনায় যেন আর কোনো নিষ্পাপ প্রাণ ঝরে না যায়, আর কোনো নিরপরাধ যেন অত্যাচারের শিকার না হয়। তা আমরা সবাই মিলে নিশ্চিত করবো।’
শপথ পাঠের আগে আবরার ফাহাদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
শপথের আগে বুয়েটের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত হন। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার মাঠ পর্যায়ের আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন তারা। তবে তারা সুষ্ঠুভাবে আবরার হত্যার বিচার কার্য সম্পন্ন হচ্ছে কি না সেটার প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখবে। বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস পরীক্ষা সহ সকল ধরণের একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
গতকাল মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) পৌনে ৬টায় বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এসব কথা বলেন। সেখানে আজ বুধবার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এক শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে বলেও জানান।
এর আগে গতকাল সোমবার আবরার হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার কারণে গত রোববার ও গতকাল সোমবার আন্দোলন শিথিল করা হয়।
আবরার হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ১৯ জনের মধ্যে চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গত ৬ অক্টোবর শেরেবাংলা হলে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) ছাত্র ছিলেন। তিনি থাকতেন বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলায় ১০১১ নম্বর কক্ষে।
ঘটনার দিন তাঁকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় একই হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে। ওই কক্ষে তাঁকে নির্যাতন করে বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। রাত ৩টার দিকে হল থেকেই তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এর পর থেকে শিক্ষার্থীরা আবরার হত্যার ঘটনায় খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি, বুয়েট ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করাসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বুয়েট ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থী ছাত্ররাজনীতিতে জড়িত হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি।