০৮ অক্টোবর ২০১৯, ১১:৩৮

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে বললেন ছাত্র কল্যাণ উপদেষ্টা

  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা বলেছেন ছাত্র কল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনস্থলে গিয়ে তিনি একথা বলেন।

অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে বর্তমানে যে পরিস্থিতি, তাতে আমার মনে হয় না যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি থাকার দরকার আছে। বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি থাকার কোনো প্রয়োজন নেই।’

তবে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের কথা না বলায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি উপাচার্যকে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা বলতে পারি। এখানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।’

আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আছি।’ এসময় তাকে সেখানে ৫টা পর্যন্ত থাকার অনুরোধ জানান শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ‘বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম আবরারের জানাযায় আসেনি। এখন পর্যন্ত ক্যাম্পাসেও আসেনি।’ এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। বুয়েটে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন ৮৫ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীরা।

আজ মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে উপাচার্যকে ক্যাম্পাসে আসার জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ৮ দফা দাবির মধ্যে এ আল্টিমেটাম উল্লেখ করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা দাবি ঘোষণা করে বলেন, ‘আবরারকে হত্যার ৩০ ঘন্টার মধ্যেও উপাচার্য ক্যাম্পাসে আসেননি। তাকে বিকেল ৫টার মধ্যে সশরীরে ক্যাম্পাসে এসে জবাবদিহি করতে হবে।’ 

এর আগে গতকাল ফোন দেওয়া হলে উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) কল রিসিভ করে উপাচার্য অসুস্থ বলে জানান। এজন্য তিনি ক্যাম্পাসে আসতে পারবেন না বলেও নিশ্চিত করেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। আবরারকে হত্যার ঘটনায় কান্নায় ভেঙে পড়েন তার সহপাঠীরা।

আবরারের খুনীদের ফাঁসির দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় বুয়েট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে ‘বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’র ব্যানারে এই মিছিল শুরু করেন তারা। পরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি।

শিক্ষার্থীদের আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, আবরারের খুনিদের ফাঁসি দেওয়া, ৭২ ঘন্টার মধ্যে জড়িতদের স্থায়ী বহিষ্কার করা, মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে দিতে হবে, উপাচার্যকে ৫টার মধ্যে ক্যাম্পাসে আসতে হবে, আবাসিক হলে ভিন্ন মতাবলম্বীদের নির্যাতনে জড়িতদের বিচার করতে হবে, আগের ঘটনাগুলোয় জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে, শের ই বাংলা হলের প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করতে হবে।

আন্দোলনকারীরা ‘খুনীদের ঠিকানা, এই বুয়েটে হবে না’, ‘ফাঁসি ফাঁসি, ফাঁসি চাই’, ‘প্রশাসনের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘ভিসি তুই নিরব কেন, জবাব চাই, দিতে হবে’, ‘আমার ভাইকে মারলি কেন? জবাব চাই দিতে হবে’,  ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

উল্লেখ্য, রোববার (৬ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাতে বুয়েটের সাধারণ ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবরারকে শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে শনাক্ত করে বুয়েটের ৯ জন ছাত্রলীগ নেতাকে পুলিশ আটক করেছে। এ ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৯ জনকে।

এছাড়া বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতিসহ কমিটির ১১ জন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে তাদের বহিষ্কার করা হয়।

সকাল পৌনে ৮টার দিকে আবরারের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি কুষ্টিয়ার রায়ডাঙ্গা গ্রামে পৌঁছালে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সেখানে হাজারও মানুষ জড়ো হন। প্রতিবেশী-স্বজনদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদেরও কাঁদতে দেখা যায়।