আবরারকে হত্যার পরও ক্যাম্পাসে যাননি বুয়েট উপাচার্য (ভিডিও)
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০১৯, ০২:৩৪ PM , আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৯, ০২:৩৪ PM
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার পর এখনও উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম ক্যাম্পাসে যাননি। আজ সোমবার দুপুর ১২ টার দিকে শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে উপাচার্যকে মোবাইলে কল দেন প্রাধ্যক্ষ।
তবে উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) কল রিসিভ করে উপাচার্য অসুস্থ বলে জানান। এজন্য তিনি ক্যাম্পাসে আসতে পারবেন না বলেও নিশ্চিত করেছেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। আবরারকে হত্যার ঘটনায় কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তার সহপাঠীরা।
এদিকে বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে সুপারিশসহ তদন্তের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির সদস্যরা হলেন, ইয়াজ আল রিয়াদ এবং আসিফ তালুকদার। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিক এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক বুয়েটের সাম্প্রতিক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানানো হচ্ছে। ছাত্রলীগ কখনো এরুপ ঘটনা বা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো।
এর আগে আবরার হত্যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাথা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার জামিউশ সানি। জড়িত যেই হোন না কেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খন্দকার জামিউশ সানি বলেন, ‘রাতে খবর পাওয়ার পরই আমি সেখানে যায়। কয়েকজন তাকে ওইরুমে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে মারধর করা হয়েছে বলে শুনেছি। যারা মারধরে জড়িত তারা সবাই ছাত্রলীগের পোস্টেড নেতা।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমন একটি ঘটনায় ছাত্রলীগের কর্মীরা জড়িত থাকতে পারে, এটা খুবই ন্যাক্কারজনক। এ ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে ছাত্রলীগের ছেলে হিসেবে নয়, অপরাধী যেই হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এসময় আবরারের পরিবারের প্রতিও গভীর শোক প্রকাশ করেন তিনি।
আবরারকে হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত দু‘জনকে আটক করার খবর পাওয়া গেছে। তারা হলেন, বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল এবং সহ সভাপতি মুস্তাকিম ফুয়াদ। এছাড়া আরও কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে এতে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছেন বুয়েটে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া শেরেবাংলা হলের যে ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে পেটানো হয় সে কক্ষের তিন ছাত্রলীগ নেতা পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপদপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ এবং সমাজসেবাবিষয়ক উপসম্পাদক ও বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশারফ ৷
রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরে বাংলা হলের দ্বিতীয়তলা থেকে আবরার ফাহাদ (২১) নামে এক ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করে কর্তৃপক্ষ। নিহত আবরার ফাহাদ ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
জানা যায়, রবিবার রাত আটটার দিকে একদল ছাত্র আবরারকে তার রুম থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে রাত দুইটার দিকে শেরে বাংলা হলের প্রথমতলা ও দ্বিতীয়তলার মাঝামাঝি জায়গায় ফাহাদের মরদেহ দেখতে পায় অন্য শিক্ষার্থীরা। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন লক্ষ্য করা গেছে। শিক্ষার্থীদের ধারণা ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
ওই সময়কার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। তিনি বলেন, ‘আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পেয়েছি। আমরা দেখছি কারা এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত। এটি যে হত্যাকাণ্ড, এতে সন্দেহ নেই।’
তিনি বলেন, ‘কয়েকটি সিটি সিসিটিভি ফুটেজ আমাদের কাছে রয়েছে। ইতিমধ্যে দুজনকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিচার বিশ্লেষণ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাজনৈতিক পরিচয় যাই থাকুক, যে জড়িত থাকবে তাকেই তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’