হত্যার পর ভাইরাল আবরারের ফেসবুক স্ট্যাটাস

  © সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যার ঘটনায় নাম জড়িয়েছে ছাত্রলীগের। অভিযোগ, ফেসবুকে লেখালেখির কারণে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

আবরারকে হত্যার ঘটনায় দু‘জনকে আটক করার খবর পাওয়া গেছে। তারা হলেন, বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল এবং সহ সভাপতি মুস্তাকিম ফুয়াদ। এছাড়া আরও কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে এতে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছেন বুয়েটে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা।

গত ৫ অক্টোবর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন আববার ফাহাদ। তাকে পিটিয়ে হত্যার পর সেই স্ট্যাটাসটি ভাইরাল হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখার সময় স্ট্যাটাসটিতে প্রায় ৩১ হাজার রিঅ্যাক্ট পড়ার পাশাপাশি ১০ হাজার বার শেয়ার হয়েছে। আবরারের সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস’র পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-

‘১. ৪৭ এ দেশভাগের পর দেশের পশ্চিমাংশেে কোন সমুদ্রবন্দর ছিল না। তৎকালীন সরকার ৬ মাসের জন্য কলকাতা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করল। কিন্তু দাদারা নিজেদের রাস্তা নিজেদের মাপার পরামর্শ দিছিলো। বাধ্য হয়ে দুর্ভিক্ষ দমনে উদ্বোধনের আগেই মংলা বন্দর খুলে দেওয়া হয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ ইন্ডিয়াকে সে মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য হাত পাততে হচ্ছে।

২. কাবেরি নদীর পানি ছাড়াছাড়ি নিয়ে কানাড়ি আর তামিলদের কামড়াকামড়ি কয়েকবছর আগে শিরোনাম হয়েছিল। যে দেশের এক রাজ্যই অন্যকে পানি দিতে চাই না, সেখানে আমরা বিনিময় ছাড়া দিনে দেড় লাখ কিউবিক মিটার পানি দেব।

৩. কয়েকবছর আগে নিজেদের সম্পদ রক্ষার দোহাই দিয়ে উত্তর ভারত কয়লা-পাথর রপ্তানি বন্ধ করেছে, অথচ আমরা তাদের গ্যাস দেব। যেখানে গ্যাসের অভাবে নিজেদের কারখানা বন্ধ করা লাগে, সেখানে নিজের সম্পদ দিয়ে বন্ধুর বাতি জ্বালাব।

হয়তো এসুখের খোঁজেই কবি লিখেছেন-
পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।’

প্রসঙ্গত, রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরে বাংলা হলের দ্বিতীয়তলা থেকে আবরার ফাহাদ (২১) নামে এক ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করে কর্তৃপক্ষ। নিহত আবরার ফাহাদ ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

জানা যায়, রবিবার রাত আটটার দিকে একদল ছাত্র আবরারকে তার রুম থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে রাত দুইটার দিকে শেরে বাংলা হলের প্রথমতলা ও দ্বিতীয়তলার মাঝামাঝি জায়গায় ফাহাদের মরদেহ দেখতে পায় অন্য শিক্ষার্থীরা। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন লক্ষ্য করা গেছে। শিক্ষার্থীদের ধারণা ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

ওই সময়কার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। তিনি বলেন, ‘আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পেয়েছি। আমরা দেখছি কারা এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত। এটি যে হত্যাকাণ্ড, এতে সন্দেহ নেই।’

তিনি বলেন, ‘কয়েকটি সিটি সিসিটিভি ফুটেজ আমাদের কাছে রয়েছে। ইতিমধ্যে দুজনকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিচার বিশ্লেষণ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাজনৈতিক পরিচয় যাই থাকুক, যে জড়িত থাকবে তাকেই তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ