পদত্যাগপত্র জমা দিলেন বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্য

অবশেষে বিদায় নিতে বাধ্য হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন। আজ সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুল্লাহ আল হাসান চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। পরে তা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছে হস্তান্তর করা হয়। মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানতে চাইলে শিক্ষা  উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, আমরা তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করছি। তবে তিনি (খোন্দকার নাসির উদ্দিন) আর উপাচার্য থাকতে চান না।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগপত্র আমরা পেয়েছি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটির একটি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের একথা জানান তিনি।

এর আগে উপাচার্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্যের অপসারণের সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় ইউজিসি। এরপর আজ সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানো হয় উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনকে। সেখানে তিনি পদত্যাগ পত্র জমা দেন।

রোববার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশই পুলিশের পাহারায় ক্যাম্পাস ছেড়ে গোপালগঞ্জ শহরের বাসায় উঠেন উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন। আজ দুপুর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অবস্থান করছিলেন বলে জানান তিনি।

তথ্যমতে, বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্যকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করে রোববার ইউজিসি তদন্তের প্রতিবেদন জমা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। ১১ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে উপাচার্যকে প্রত্যাহার করা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে উঠা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এছাড়া কমিটি উপাচার্যের অনিয়ম, অদক্ষতা, দায়িত্বহীনতা ও অদূরদর্শিতা দেখতে পেয়েছে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে স্বেরাচারী আচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলন করছে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২৪ সেপ্টেম্বর ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ইউজিসি।

প্রসঙ্গত, জাতির জনকের নামে গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা কাযর্ক্রম শুরু করে ২০১১ সালে। এখন ৩৪টি বিষয়ে মোট শিক্ষার্থী ১২ হাজারের মতো। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খোন্দকার নাসিরউদ্দিন ২০১৫ সালে দ্বিতীয় উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি গোপালগঞ্জের বাসিন্দা হওয়ায় চলতি বছর দ্বিতীয় মেয়াদেও উপাচার্যের দায়িত্ব পেতে তাঁর বেগ পেতে হয়নি।

অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, তিন বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ‌‘বিশেষ কোটা’ (১ শতাংশ) নামে এক ধরনের ভর্তি কোটা চালু করেছেন উপাচার্য। ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম ২৫ পেলেই এই কোটায় ভর্তির সুযোগ পাওয়া যায়। 

কয়েকজন শিক্ষক জানান, এই কোটা উপাচার্য নিজেই ঠিক করেন। এ সুযোগে যেনতেন ছাত্রও ভর্তি হয়েছেন। ফার্মাসি বিভাগে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে এমন কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন, যাঁদের ফরমের ওপর বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, সাধারণ কোটার বাইরেও বিভিন্নজনের সুপারিশের ভিত্তিতে বিশেষ কোটায় ভর্তি করা হয়।

আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ: শিক্ষার্থীদের টাকায় দুর্যোগ ও ত্রাণকল্যাণ তহবিল রয়েছে। কিন্তু এই টাকা বণ্টনে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্রামবাসীর মারামারির ঘটনায় ছাত্রদের আপ্যায়ন বাবদ ৪০ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে এই তহবিলের টাকায়। শুধু তা–ই নয়, ঈদ উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের খাবার পরিবেশনের জন্য ১ লাখ টাকার খরচ দেখানো হয়েছে এই তহবিলের টাকায়। অথচ ঈদে সাধারণত শিক্ষার্থীরা হলে থাকেন না।

ভর্তি ফরমের আয় থেকে ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। আবার বই কেনাসহ কিছু কাজের কেনাকাটায় ক্রয়প্রক্রিয়া যথাযথভাবে মানা হয়নি বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। 

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল করার কথা থাকলেও সেটি করা হয়নি। তখন এর খরচ ধরা হয়েছিল প্রায় আড়াই কোটি টাকা। কিন্তু এত দিনে না হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ব্যয় বাড়বে। এখানেই শেষ নয়, কাজ না হলেও এই খাতের রাখা টাকা ব্যয়ের হিসাবে রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অন্যদিকে একটি শহীদ মিনার করার কথা থাকলেও এখনো কাঠের শহীদ মিনারই রয়েছে। সেটির অবস্থাও করুণ। শহীদ মিনারের জন্য বরাদ্দ টাকার একটি বড় অংশ ব্যয়ের হিসাবে রাখা হয়েছে। 

ইউজিসির পরিচালক ফেরদৌস জামান বলেন, কাজ শেষ না করে টাকা ব্যয়ের হিসাবে দেখানোর নিয়ম নেই।

তুচ্ছ ঘটনায় শোকজ: ফার্মাসি ও গণিতের দুজন শিক্ষক জানান, তুচ্ছ ঘটনায় তাঁদের শোকজ করা হয়েছে। এই তালিকায় বাদ যাননি বিশ্ববিদ্যালের একমাত্র নিয়মিত অধ্যাপক মো. শাহজাহানও। ফার্মাসির শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, খেলার মাঠে শিক্ষার্থীদের কথা–কাটাকাটির বিষয়ে তাঁকে শোকজ করা হয়েছে। আর তাতে আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

এ ছাড়া আট শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে পরে আবার প্রত্যাহার করা হয়। সর্বশেষ আইন বিভাগের ছাত্রী ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে বহিষ্কারের পর শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। আন্দোলনের মুখে এই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। শিক্ষার্থীরা ১১ দিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। এছাড়া উপাচার্যের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে ঝাড়ুমিছিল বের করেন ছাত্রীরা। 


সর্বশেষ সংবাদ