শাবি ভিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ: ক্যাম্পাসে তোলপাড়
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের দুর্নীতির একটি শ্বেতপত্র প্রকাশিত হয়েছে। শনিবার ‘শাবিপ্রবির বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বিভিন্ন অপকর্মের শ্বেতপত্র’ শিরোনামে ২৪ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্রটি প্রকাশিত হওয়ার পরই ক্যাম্পাসে তোলপাড় শুরু হয়।
প্রকাশিত শ্বেতপত্রে অভিযোগকারীরা নিজেদের নাম প্রকাশ না করলেও ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার শাবিপ্রবির শিক্ষক ও কর্মকর্তাবৃন্দ’ উল্লেখ করেছে। বেনামে প্রকাশ করার শ্বেতপত্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র বলে দাবি করছেন ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তার দাবি, মোকাবেলা করার সাহস নেই বলেই কে বা কারা বেনামে শ্বেতপত্রটি বের করেছে। রোববার শ্বেতপত্রের বিভিন্ন অভিযোগের বিপরীতে নিজের অবস্থান সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন তিনি।
শ্বেতপত্রের তথ্যের গভীরতা দেখে বোঝা যায়, প্রশাসনিক বিভিন্ন কাজকর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এ কাজ করে থাকতে পারে। এ বিষয়ে ভিসি বলছেন, ‘এর পেছনে কারা, তা মোটামুটি ৯০ শতাংশ বুঝতে পেরেছি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে না থাকলে যাদের স্বার্থ হাসিল হবে, তারাই এ অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
শ্বেতপত্রে ফরিদ উদ্দিন আহমেদের আর্থিক দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, বিএনপি-জামায়াত তোষণ, নারীপ্রীতি, মানুষকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা, শাবিকে কুমিল্লায়ন করাসহ ৫৩টি অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে শাবির গ্র্যাজুয়েটদের অগ্রাহ্য করার বিষয়ে ভিসি বলেন, ‘আমি ২০১৭ এর আগস্টে যোগ দেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৭৮ জন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন, যার মধ্যে ৪৭ জন শাবির। মেকানিক্যাল, সমুদ্রবিজ্ঞান, ভাষা ইন্সটিটিউটের ফরাসি ও জার্মান ভাষায় শাবি থেকে কোনো গ্র্যাজুয়েট বের না হওয়ায় এই কয়টি বিভাগে সব শিক্ষক অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন।
শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতাসম্পন্ন ও মেধাবীদের বাদ দিয়ে নিজ জেলা কুমিল্লার প্রার্থী, নিজের আত্মীয়স্বজন, নিজ অনুগত শিক্ষকদের সন্তানদের প্রাধান্যের অভিযোগে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভিসি নই, আমি সবার। এ অভিযোগ পুরোপুরি বানোয়াট।’
শ্বেতপত্রে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম দিপুর মেয়েকে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও (৩.৫) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে নিয়োগ প্রদানের অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্যদিকে ভিসির বিরুদ্ধে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট বৈঠকে পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে ভিসি বলেন, ‘এটা পুরোপুরি মিথ্যাচার। সবারই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে।’
শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্যবীমা চালুর বিষয়ে ভিসির বিশেষ সুবিধালাভের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে শ্বেতপত্রে। এতে বলা হয়, নিজস্ব আর্থিক সুবিধার জন্য ভিসি সব শিক্ষককে বাধ্য করেছেন এ চুক্তি স্বাক্ষরে। ভিসিকে ভিজিটিং ভিসি আখ্যায়িত করে সপ্তাহে তিন দিনের বেশি ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। বিমানযোগে ঢাকায় যাতায়াত করে সরকারি অর্থের অপচয় করার বিষয়টিও শ্বেতপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়ে ভিসি বলেন, ‘একজন মানুষের পক্ষে যতটুকু সম্ভব, তার পুরোটা দিয়েই আমি অফিস করছি। আমার অফিসে কোনো পেন্ডিং ফাইল বা জট নেই।’
নিয়োগের দুই বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত কোনো দৃশ্যমান উন্নতি না হওয়া এবং বরাদ্দকৃত ২০০ কোটি টাকার অর্থ ব্যয় করতে না পারার বিষয়টিও শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আরও যেসব বিষয় উঠেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- প্রমোশন ও আপগ্রেডেশনের ক্ষেত্রে অনিয়ম, দ্বিতীয় গ্রেডে উন্নীতকরণ প্রার্থীদের সঙ্গে বিধিবহির্ভূতভাবে অপমানজনক আচরণ, নিয়মবহির্ভূতভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ পরিবর্তন, জোবাইক চালুর নামে প্রতারণা, আইসিভিসি সম্মেলনের নামে অর্থ অপচয় ও রেজিস্ট্রারকে চরম অপমান। সবশেষে ভিসির বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
ভিসির বক্তব্য : শ্বেতপত্রের বিষয়ে সাংবাদিকদের শাবি ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন জানান, বেনামে যখন কেউ কোনো কিছু প্রকাশ করে তার মানে, তার নৈতিক ভিত্তি দুর্বল। শ্বেতপত্রের প্রতিটি বিষয়ের ব্যাখ্যা আমার কাছে আছে। আমি স্পষ্ট বলতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ৯৮৭ কোটি টাকার প্রজেক্টে সুবিধা না করতে পেরে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। একটা গ্রুপ চায় না আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকি। আমি আসার পর এখন পর্যন্ত কোনো অডিট আপত্তি নেই, রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই, প্রোমোশন আপগ্রেডেশনে জটিলতা নেই, সেশন জট নেই। আমি এখানে এসেছি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ‘ভ্যালু অ্যাড’ করতে, যা অনেকের সহ্য হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে অস্থির করতেই বানোয়াট তথ্য দিয়ে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে এই শ্বেতপত্রটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রচার করা হচ্ছে।